• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

ডায়েরির পাতার টানে প্রথম পর্ব - ১

Nilabha

Wellknown Ace
পর্ব -১

অন্যদিনের মতো সেদিনও গিয়েছিলাম অঙ্কনের বাড়ি। অঙ্কন আর আমি স্কুল লাইফের ক্লাসমেট। তারপর একই ইয়ারে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন দুজনেই সাহিত্যচর্চা করছি। তবে আজকাল এ পাড়ায় ওর বেশ নামডাক হয়েছে বটে একজন উঁচু দরের সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে। অঙ্কন জমিদার বংশের সন্তান। অর্থাভাবের সম্মুখীন কখনো হতে হয়নি আর সম্ভবত কখনো হতেও হবেনা তাকে । এখন কলকাতায় বাস করলেও তার আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের এক মফস্বল অঞ্চলে, সেখানেই থাকেন তার মা বাবা, কিন্তু পড়াশোনার সূত্রে তাকে এখানে থাকতে হতো। এখন অবিশ্যি কলকাতা ছাড়তে মন চায়না বলেই এখানেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে । তো সেই গ্রামের জমিদারদের বংশধর আমাদের অঙ্কন। কিছু চেয়ে না পাওয়ার অভ্যেসটা তার নেই। পিতৃপুরুষের টাকায় বেশ আয়েশ করে দিন চলে যায় বলে, কখনো কোনো চাকরি বা ব্যবসা করে খেটে অর্থ উপার্জন করার কথা চিন্তাই করতে হয়নি তাকে। আরাম আর ঐশ্বর্যের অভাব না হলেও সারাদিন শুয়ে বসে কাটানোটা যথেষ্ট অস্বস্তিকর তার কাছে। সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের মানুষদের একটা ইউনিক হবি থাকেই। অঙ্কনেরও আছে। আর তা হলো উঁচু দরের সাহিত্যগুন সম্পন্ন পুস্তকাদি জোগাড় করে তার লাইব্রেরীর শোভা বৃদ্ধি করা। সাহিত্য সম্পর্কে বিশেষ কোনো জ্ঞানই যে তার নেই সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত। কিন্তু যারা তার বিষয়ে জানে না, তাদের কাছে বিশেষ কিছু পরিচিত সাহিত্যিকদের উক্তিকে নিজের মতো করে সাজিয়ে এমন ভাবে উপস্থাপন করে অঙ্কন যে বোঝার কোনো উপায়ই থাকে না তার সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞানের দৌড় ঠিক কতটা। যতগুলো বই তার সংগ্রহে আছে তার মধ্যে সে নিজে যে কতগুলো পড়েছে আদৌ একটাও পড়েছে কিনা তা নিয়েও আমি যথেষ্ট সন্দিহান। কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য আমি করিনা কারণ বহুক্ষেত্রে আমার এই বন্ধুটির দ্বারস্থ হতে হয় আর্থিক সমস্যার ক্ষেত্রে। তবে আর যাই হোক ছেলেটা দিলখোলা বটে। কখনো কোনো সমস্যায় পড়লে আমায় একদিনও ফিরিয়ে দেয়নি সে। বরং প্রয়োজনের বেশি দিয়েই সাহায্য করেছে। তো এই অঙ্কনের আজকাল নামডাক হওয়ায় প্রায় রোজ ই তার বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকে। রোজই কেউ না কেউ আসে তার লাইব্রেরী দেখতে। আর অঙ্কনও বুক ফুলিয়ে তার বিপুল সংগ্রহের নমুনা পেশ করে। তবে আজকাল তার আবার অন্য একটা শখ জেগেছে। প্রত্যেক জমিদারদের রক্তে হয়তো এই শখ বর্তমান। সন্ধায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবার শখ। আমাদেরই কলেজের ফ্রেন্ড সার্কেলের কয়েকটি বন্ধু সাহিত্য নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলো। তো তাদের সাথেই যোগাযোগ করে প্রতিদিনই একটা সান্ধ্য সাহিত্যচর্চার আয়োজন করলে সে। নিশ্চিতভাবে সেই আড্ডায় আমিও ছিলাম একজন সদস্য। বিশেষ কিছু নিয়ে নয়, এই পুরনো কলেজের গল্প, কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার গল্প, আবার মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক কথাবার্তায় জমে উঠতো আড্ডা। সেদিন আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল ভুত, যেটা বাঙালিদের অত্যন্ত প্রিয় একটা চর্চার বিষয়। ভুত আছে কি না সে সম্পর্কে তর্ক যখন তুঙ্গে তখন আমি অঙ্কনের লাইব্রেরীর কিছু বই দেখতে ব্যস্ত। আমার ব্যক্তিগতভাবে এই ভুত বিষয়টা খুবই অপছন্দের। তাই এসব নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতেও দ্বিধাবোধ করি। এসব ভাবতে ভাবতেই বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছি হঠাৎ চোখে পড়লো মোটা মোটা কয়েকটা বিদেশী বইয়ের ফাঁকে লাল কাপড়ে বাঁধানো একটা অপেক্ষাকৃত পাতলা গোছের বইটা। সেটা বের করতেই বুঝতে পারলাম যে বই নয়, সেটা একটা ডায়েরি। এত বড়োসড়ো মাপের লাইব্রেরীতে একটা সামান্য ডায়েরি কেনো রাখা সেটা ভেবে বের করতেই মিনিট পাঁচেক কেটে গেলো তবে কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর পেলাম না। তারপর ডায়েরিটা বাম হাতে ধরে অতি সযত্নে ডান হাতে প্রথম পাতাটা খুললাম। নাহ্, কোনো নাম নেই ডায়েরিতে। তবে এ ডায়েরি যে অঙ্কনের নয় সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত কারণ ডায়েরি লেখার অভেস তার নেই। তাহলে এটা কার ডায়েরি। আর যার ই ডায়েরি হোক এটা অঙ্কন কোথা থেকে পেলো সেসব ভাবতে ভাবতেই ডায়েরির পরের পাতাটা খুলে ফেললাম। সম্পূর্ণটাই ইংরেজি ভাষায় লেখা তবে কিছু বিশেষ শব্দের ক্ষেত্রে পর্তুগিজ ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বেশ পরিষ্কার হস্তাক্ষর। আনমনে পড়তে শুরু করলাম।
19th May, 1734
পুরনো ডায়েরিটা এখানে আনতে ভুলে গেছি তাই নতুন ডায়েরি কিনে লিখতে হচ্ছে। আজই জঙ্গলে পৌঁছলাম আমরা। ব্রাজিলের এই অ্যামাজন কেনো এত বিখ্যাত আর চর্চিত বিষয় তা এখানে এসে বেশ বুঝতে পারছি। জঙ্গল এত ঘন আর অন্ধকার যে দিন আর রাতের পার্থক্য বুঝে ওঠা বেশ বিভ্রান্তিকর।
আমি, ডক্টর স্যাঙ্গফ্রইড আর প্রফেসর ডানকান এখানে মূলত ফ্লোরেস ডর্মিন্ডোর খোঁজেই এসেছি। ইংরেজিতে যাকে বলে স্লীপিং ফ্লাওয়ার। এই ফুলের বিশেষত্ব হলো যেকোনো ডিপ্রেসন বা ইনসমনিয়ার পেশেন্টকে অতি সহজেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা এর আছে। ঘুমের ওষুধেও হয়তো সে কাজ হয়ে যায় কিন্তু তার তুলনায় এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী আর তার থেকেও বড়ো বিষয় এর কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। সেই ফুলের খোঁজই আমাদের অ্যামাজনে আসার আসল উদ্দেশ্য। আজ সবাই ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো। কাল থেকে শুরু হবে আমাদের রিসার্চ।

- ভাই অঙ্কন, এই ডায়েরিটা তুই কত্থেকে পেলি রে?
আড্ডার শেষে সবাই চলে গেলে আমি অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করলাম।
- কোন ডায়েরী?
ওর হাতে ডায়েরিটা দিলাম।
- ওহ্ এইটা! এটা আমি একটা অকশন থেকে কিনেছিলাম। ব্রাজিলের কোন এক মিউজিয়াম ভাঙ্গা হয়েছিলো আর সেখান থেকে অনেক জিনিস এই কলকাতায় আনা হয়েছিলো অকশনের জন্য । সেখানে এই লাইব্রেরীর উপযোগী বিশেষ কিছু পাচ্ছিলাম না। আর কোনো অকশনে সম্পূর্ণ খালি হাতে ফিরে আসাটা আমার নীতিবিরুদ্ধ । তাই এটা নিলামে উঠতেই হাঁক পাড়লাম, সস্তায় পেয়েও গেলাম। কিন্তু তুই জানতে চাইছিস কেনো বলতো?
- না তেমন কিছু নয়, এটা রাখা যেতে পারে কয়েকটা দিনের জন্য?
- হুঁ তা রাখ, তবে ব্যাপার টা কি বলতো ভাই?
- ডায়েরিটা বেশ ইন্টারেস্টিং একটু স্টাডি করে তোকে জানাবো বুঝলি। আজ আসি।
বলেই ডায়েরিটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এলাম। তখন ঘড়িতে প্রায় দশটা। মা খেতে ডাকলেন তাই বইটা আমার স্টাডি টেবিলের ড্রয়ারে রেখে খেতে চলে গেলাম।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘরে ঢুকে ভেতরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চেয়ারে বসে ডায়েরিটা পড়া আরম্ভ করলাম। প্রথম পাতাটা পরে মনে যে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে তা যদি সত্যি হয় তবে এ ডায়েরি অমূল্য। পড়তে পড়তে অনেকটা রাত হয়ে গেলো, ঘড়ির কাঁটা নিস্তব্ধ রাত্রে বলে চললো টিক টিক টিক।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে....)
 
পর্ব -১

অন্যদিনের মতো সেদিনও গিয়েছিলাম অঙ্কনের বাড়ি। অঙ্কন আর আমি স্কুল লাইফের ক্লাসমেট। তারপর একই ইয়ারে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন দুজনেই সাহিত্যচর্চা করছি। তবে আজকাল এ পাড়ায় ওর বেশ নামডাক হয়েছে বটে একজন উঁচু দরের সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে। অঙ্কন জমিদার বংশের সন্তান। অর্থাভাবের সম্মুখীন কখনো হতে হয়নি আর সম্ভবত কখনো হতেও হবেনা তাকে । এখন কলকাতায় বাস করলেও তার আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের এক মফস্বল অঞ্চলে, সেখানেই থাকেন তার মা বাবা, কিন্তু পড়াশোনার সূত্রে তাকে এখানে থাকতে হতো। এখন অবিশ্যি কলকাতা ছাড়তে মন চায়না বলেই এখানেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে । তো সেই গ্রামের জমিদারদের বংশধর আমাদের অঙ্কন। কিছু চেয়ে না পাওয়ার অভ্যেসটা তার নেই। পিতৃপুরুষের টাকায় বেশ আয়েশ করে দিন চলে যায় বলে, কখনো কোনো চাকরি বা ব্যবসা করে খেটে অর্থ উপার্জন করার কথা চিন্তাই করতে হয়নি তাকে। আরাম আর ঐশ্বর্যের অভাব না হলেও সারাদিন শুয়ে বসে কাটানোটা যথেষ্ট অস্বস্তিকর তার কাছে। সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের মানুষদের একটা ইউনিক হবি থাকেই। অঙ্কনেরও আছে। আর তা হলো উঁচু দরের সাহিত্যগুন সম্পন্ন পুস্তকাদি জোগাড় করে তার লাইব্রেরীর শোভা বৃদ্ধি করা। সাহিত্য সম্পর্কে বিশেষ কোনো জ্ঞানই যে তার নেই সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত। কিন্তু যারা তার বিষয়ে জানে না, তাদের কাছে বিশেষ কিছু পরিচিত সাহিত্যিকদের উক্তিকে নিজের মতো করে সাজিয়ে এমন ভাবে উপস্থাপন করে অঙ্কন যে বোঝার কোনো উপায়ই থাকে না তার সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞানের দৌড় ঠিক কতটা। যতগুলো বই তার সংগ্রহে আছে তার মধ্যে সে নিজে যে কতগুলো পড়েছে আদৌ একটাও পড়েছে কিনা তা নিয়েও আমি যথেষ্ট সন্দিহান। কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য আমি করিনা কারণ বহুক্ষেত্রে আমার এই বন্ধুটির দ্বারস্থ হতে হয় আর্থিক সমস্যার ক্ষেত্রে। তবে আর যাই হোক ছেলেটা দিলখোলা বটে। কখনো কোনো সমস্যায় পড়লে আমায় একদিনও ফিরিয়ে দেয়নি সে। বরং প্রয়োজনের বেশি দিয়েই সাহায্য করেছে। তো এই অঙ্কনের আজকাল নামডাক হওয়ায় প্রায় রোজ ই তার বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকে। রোজই কেউ না কেউ আসে তার লাইব্রেরী দেখতে। আর অঙ্কনও বুক ফুলিয়ে তার বিপুল সংগ্রহের নমুনা পেশ করে। তবে আজকাল তার আবার অন্য একটা শখ জেগেছে। প্রত্যেক জমিদারদের রক্তে হয়তো এই শখ বর্তমান। সন্ধায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবার শখ। আমাদেরই কলেজের ফ্রেন্ড সার্কেলের কয়েকটি বন্ধু সাহিত্য নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলো। তো তাদের সাথেই যোগাযোগ করে প্রতিদিনই একটা সান্ধ্য সাহিত্যচর্চার আয়োজন করলে সে। নিশ্চিতভাবে সেই আড্ডায় আমিও ছিলাম একজন সদস্য। বিশেষ কিছু নিয়ে নয়, এই পুরনো কলেজের গল্প, কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার গল্প, আবার মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক কথাবার্তায় জমে উঠতো আড্ডা। সেদিন আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল ভুত, যেটা বাঙালিদের অত্যন্ত প্রিয় একটা চর্চার বিষয়। ভুত আছে কি না সে সম্পর্কে তর্ক যখন তুঙ্গে তখন আমি অঙ্কনের লাইব্রেরীর কিছু বই দেখতে ব্যস্ত। আমার ব্যক্তিগতভাবে এই ভুত বিষয়টা খুবই অপছন্দের। তাই এসব নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতেও দ্বিধাবোধ করি। এসব ভাবতে ভাবতেই বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছি হঠাৎ চোখে পড়লো মোটা মোটা কয়েকটা বিদেশী বইয়ের ফাঁকে লাল কাপড়ে বাঁধানো একটা অপেক্ষাকৃত পাতলা গোছের বইটা। সেটা বের করতেই বুঝতে পারলাম যে বই নয়, সেটা একটা ডায়েরি। এত বড়োসড়ো মাপের লাইব্রেরীতে একটা সামান্য ডায়েরি কেনো রাখা সেটা ভেবে বের করতেই মিনিট পাঁচেক কেটে গেলো তবে কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর পেলাম না। তারপর ডায়েরিটা বাম হাতে ধরে অতি সযত্নে ডান হাতে প্রথম পাতাটা খুললাম। নাহ্, কোনো নাম নেই ডায়েরিতে। তবে এ ডায়েরি যে অঙ্কনের নয় সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত কারণ ডায়েরি লেখার অভেস তার নেই। তাহলে এটা কার ডায়েরি। আর যার ই ডায়েরি হোক এটা অঙ্কন কোথা থেকে পেলো সেসব ভাবতে ভাবতেই ডায়েরির পরের পাতাটা খুলে ফেললাম। সম্পূর্ণটাই ইংরেজি ভাষায় লেখা তবে কিছু বিশেষ শব্দের ক্ষেত্রে পর্তুগিজ ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বেশ পরিষ্কার হস্তাক্ষর। আনমনে পড়তে শুরু করলাম।
19th May, 1734
পুরনো ডায়েরিটা এখানে আনতে ভুলে গেছি তাই নতুন ডায়েরি কিনে লিখতে হচ্ছে। আজই জঙ্গলে পৌঁছলাম আমরা। ব্রাজিলের এই অ্যামাজন কেনো এত বিখ্যাত আর চর্চিত বিষয় তা এখানে এসে বেশ বুঝতে পারছি। জঙ্গল এত ঘন আর অন্ধকার যে দিন আর রাতের পার্থক্য বুঝে ওঠা বেশ বিভ্রান্তিকর।
আমি, ডক্টর স্যাঙ্গফ্রইড আর প্রফেসর ডানকান এখানে মূলত ফ্লোরেস ডর্মিন্ডোর খোঁজেই এসেছি। ইংরেজিতে যাকে বলে স্লীপিং ফ্লাওয়ার। এই ফুলের বিশেষত্ব হলো যেকোনো ডিপ্রেসন বা ইনসমনিয়ার পেশেন্টকে অতি সহজেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা এর আছে। ঘুমের ওষুধেও হয়তো সে কাজ হয়ে যায় কিন্তু তার তুলনায় এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী আর তার থেকেও বড়ো বিষয় এর কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। সেই ফুলের খোঁজই আমাদের অ্যামাজনে আসার আসল উদ্দেশ্য। আজ সবাই ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো। কাল থেকে শুরু হবে আমাদের রিসার্চ।

- ভাই অঙ্কন, এই ডায়েরিটা তুই কত্থেকে পেলি রে?
আড্ডার শেষে সবাই চলে গেলে আমি অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করলাম।
- কোন ডায়েরী?
ওর হাতে ডায়েরিটা দিলাম।
- ওহ্ এইটা! এটা আমি একটা অকশন থেকে কিনেছিলাম। ব্রাজিলের কোন এক মিউজিয়াম ভাঙ্গা হয়েছিলো আর সেখান থেকে অনেক জিনিস এই কলকাতায় আনা হয়েছিলো অকশনের জন্য । সেখানে এই লাইব্রেরীর উপযোগী বিশেষ কিছু পাচ্ছিলাম না। আর কোনো অকশনে সম্পূর্ণ খালি হাতে ফিরে আসাটা আমার নীতিবিরুদ্ধ । তাই এটা নিলামে উঠতেই হাঁক পাড়লাম, সস্তায় পেয়েও গেলাম। কিন্তু তুই জানতে চাইছিস কেনো বলতো?
- না তেমন কিছু নয়, এটা রাখা যেতে পারে কয়েকটা দিনের জন্য?
- হুঁ তা রাখ, তবে ব্যাপার টা কি বলতো ভাই?
- ডায়েরিটা বেশ ইন্টারেস্টিং একটু স্টাডি করে তোকে জানাবো বুঝলি। আজ আসি।
বলেই ডায়েরিটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এলাম। তখন ঘড়িতে প্রায় দশটা। মা খেতে ডাকলেন তাই বইটা আমার স্টাডি টেবিলের ড্রয়ারে রেখে খেতে চলে গেলাম।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘরে ঢুকে ভেতরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চেয়ারে বসে ডায়েরিটা পড়া আরম্ভ করলাম। প্রথম পাতাটা পরে মনে যে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে তা যদি সত্যি হয় তবে এ ডায়েরি অমূল্য। পড়তে পড়তে অনেকটা রাত হয়ে গেলো, ঘড়ির কাঁটা নিস্তব্ধ রাত্রে বলে চললো টিক টিক টিক।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে....)
Darun shuruta ..... chaliye jao ... valo lagte shuru korechhe ... khub jhor jhore lekha tomar .....
 
পর্ব -১

অন্যদিনের মতো সেদিনও গিয়েছিলাম অঙ্কনের বাড়ি। অঙ্কন আর আমি স্কুল লাইফের ক্লাসমেট। তারপর একই ইয়ারে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন দুজনেই সাহিত্যচর্চা করছি। তবে আজকাল এ পাড়ায় ওর বেশ নামডাক হয়েছে বটে একজন উঁচু দরের সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে। অঙ্কন জমিদার বংশের সন্তান। অর্থাভাবের সম্মুখীন কখনো হতে হয়নি আর সম্ভবত কখনো হতেও হবেনা তাকে । এখন কলকাতায় বাস করলেও তার আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের এক মফস্বল অঞ্চলে, সেখানেই থাকেন তার মা বাবা, কিন্তু পড়াশোনার সূত্রে তাকে এখানে থাকতে হতো। এখন অবিশ্যি কলকাতা ছাড়তে মন চায়না বলেই এখানেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে । তো সেই গ্রামের জমিদারদের বংশধর আমাদের অঙ্কন। কিছু চেয়ে না পাওয়ার অভ্যেসটা তার নেই। পিতৃপুরুষের টাকায় বেশ আয়েশ করে দিন চলে যায় বলে, কখনো কোনো চাকরি বা ব্যবসা করে খেটে অর্থ উপার্জন করার কথা চিন্তাই করতে হয়নি তাকে। আরাম আর ঐশ্বর্যের অভাব না হলেও সারাদিন শুয়ে বসে কাটানোটা যথেষ্ট অস্বস্তিকর তার কাছে। সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের মানুষদের একটা ইউনিক হবি থাকেই। অঙ্কনেরও আছে। আর তা হলো উঁচু দরের সাহিত্যগুন সম্পন্ন পুস্তকাদি জোগাড় করে তার লাইব্রেরীর শোভা বৃদ্ধি করা। সাহিত্য সম্পর্কে বিশেষ কোনো জ্ঞানই যে তার নেই সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত। কিন্তু যারা তার বিষয়ে জানে না, তাদের কাছে বিশেষ কিছু পরিচিত সাহিত্যিকদের উক্তিকে নিজের মতো করে সাজিয়ে এমন ভাবে উপস্থাপন করে অঙ্কন যে বোঝার কোনো উপায়ই থাকে না তার সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞানের দৌড় ঠিক কতটা। যতগুলো বই তার সংগ্রহে আছে তার মধ্যে সে নিজে যে কতগুলো পড়েছে আদৌ একটাও পড়েছে কিনা তা নিয়েও আমি যথেষ্ট সন্দিহান। কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য আমি করিনা কারণ বহুক্ষেত্রে আমার এই বন্ধুটির দ্বারস্থ হতে হয় আর্থিক সমস্যার ক্ষেত্রে। তবে আর যাই হোক ছেলেটা দিলখোলা বটে। কখনো কোনো সমস্যায় পড়লে আমায় একদিনও ফিরিয়ে দেয়নি সে। বরং প্রয়োজনের বেশি দিয়েই সাহায্য করেছে। তো এই অঙ্কনের আজকাল নামডাক হওয়ায় প্রায় রোজ ই তার বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকে। রোজই কেউ না কেউ আসে তার লাইব্রেরী দেখতে। আর অঙ্কনও বুক ফুলিয়ে তার বিপুল সংগ্রহের নমুনা পেশ করে। তবে আজকাল তার আবার অন্য একটা শখ জেগেছে। প্রত্যেক জমিদারদের রক্তে হয়তো এই শখ বর্তমান। সন্ধায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবার শখ। আমাদেরই কলেজের ফ্রেন্ড সার্কেলের কয়েকটি বন্ধু সাহিত্য নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলো। তো তাদের সাথেই যোগাযোগ করে প্রতিদিনই একটা সান্ধ্য সাহিত্যচর্চার আয়োজন করলে সে। নিশ্চিতভাবে সেই আড্ডায় আমিও ছিলাম একজন সদস্য। বিশেষ কিছু নিয়ে নয়, এই পুরনো কলেজের গল্প, কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার গল্প, আবার মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক কথাবার্তায় জমে উঠতো আড্ডা। সেদিন আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল ভুত, যেটা বাঙালিদের অত্যন্ত প্রিয় একটা চর্চার বিষয়। ভুত আছে কি না সে সম্পর্কে তর্ক যখন তুঙ্গে তখন আমি অঙ্কনের লাইব্রেরীর কিছু বই দেখতে ব্যস্ত। আমার ব্যক্তিগতভাবে এই ভুত বিষয়টা খুবই অপছন্দের। তাই এসব নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতেও দ্বিধাবোধ করি। এসব ভাবতে ভাবতেই বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছি হঠাৎ চোখে পড়লো মোটা মোটা কয়েকটা বিদেশী বইয়ের ফাঁকে লাল কাপড়ে বাঁধানো একটা অপেক্ষাকৃত পাতলা গোছের বইটা। সেটা বের করতেই বুঝতে পারলাম যে বই নয়, সেটা একটা ডায়েরি। এত বড়োসড়ো মাপের লাইব্রেরীতে একটা সামান্য ডায়েরি কেনো রাখা সেটা ভেবে বের করতেই মিনিট পাঁচেক কেটে গেলো তবে কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর পেলাম না। তারপর ডায়েরিটা বাম হাতে ধরে অতি সযত্নে ডান হাতে প্রথম পাতাটা খুললাম। নাহ্, কোনো নাম নেই ডায়েরিতে। তবে এ ডায়েরি যে অঙ্কনের নয় সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত কারণ ডায়েরি লেখার অভেস তার নেই। তাহলে এটা কার ডায়েরি। আর যার ই ডায়েরি হোক এটা অঙ্কন কোথা থেকে পেলো সেসব ভাবতে ভাবতেই ডায়েরির পরের পাতাটা খুলে ফেললাম। সম্পূর্ণটাই ইংরেজি ভাষায় লেখা তবে কিছু বিশেষ শব্দের ক্ষেত্রে পর্তুগিজ ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বেশ পরিষ্কার হস্তাক্ষর। আনমনে পড়তে শুরু করলাম।
19th May, 1734
পুরনো ডায়েরিটা এখানে আনতে ভুলে গেছি তাই নতুন ডায়েরি কিনে লিখতে হচ্ছে। আজই জঙ্গলে পৌঁছলাম আমরা। ব্রাজিলের এই অ্যামাজন কেনো এত বিখ্যাত আর চর্চিত বিষয় তা এখানে এসে বেশ বুঝতে পারছি। জঙ্গল এত ঘন আর অন্ধকার যে দিন আর রাতের পার্থক্য বুঝে ওঠা বেশ বিভ্রান্তিকর।
আমি, ডক্টর স্যাঙ্গফ্রইড আর প্রফেসর ডানকান এখানে মূলত ফ্লোরেস ডর্মিন্ডোর খোঁজেই এসেছি। ইংরেজিতে যাকে বলে স্লীপিং ফ্লাওয়ার। এই ফুলের বিশেষত্ব হলো যেকোনো ডিপ্রেসন বা ইনসমনিয়ার পেশেন্টকে অতি সহজেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা এর আছে। ঘুমের ওষুধেও হয়তো সে কাজ হয়ে যায় কিন্তু তার তুলনায় এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী আর তার থেকেও বড়ো বিষয় এর কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। সেই ফুলের খোঁজই আমাদের অ্যামাজনে আসার আসল উদ্দেশ্য। আজ সবাই ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো। কাল থেকে শুরু হবে আমাদের রিসার্চ।

- ভাই অঙ্কন, এই ডায়েরিটা তুই কত্থেকে পেলি রে?
আড্ডার শেষে সবাই চলে গেলে আমি অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করলাম।
- কোন ডায়েরী?
ওর হাতে ডায়েরিটা দিলাম।
- ওহ্ এইটা! এটা আমি একটা অকশন থেকে কিনেছিলাম। ব্রাজিলের কোন এক মিউজিয়াম ভাঙ্গা হয়েছিলো আর সেখান থেকে অনেক জিনিস এই কলকাতায় আনা হয়েছিলো অকশনের জন্য । সেখানে এই লাইব্রেরীর উপযোগী বিশেষ কিছু পাচ্ছিলাম না। আর কোনো অকশনে সম্পূর্ণ খালি হাতে ফিরে আসাটা আমার নীতিবিরুদ্ধ । তাই এটা নিলামে উঠতেই হাঁক পাড়লাম, সস্তায় পেয়েও গেলাম। কিন্তু তুই জানতে চাইছিস কেনো বলতো?
- না তেমন কিছু নয়, এটা রাখা যেতে পারে কয়েকটা দিনের জন্য?
- হুঁ তা রাখ, তবে ব্যাপার টা কি বলতো ভাই?
- ডায়েরিটা বেশ ইন্টারেস্টিং একটু স্টাডি করে তোকে জানাবো বুঝলি। আজ আসি।
বলেই ডায়েরিটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এলাম। তখন ঘড়িতে প্রায় দশটা। মা খেতে ডাকলেন তাই বইটা আমার স্টাডি টেবিলের ড্রয়ারে রেখে খেতে চলে গেলাম।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘরে ঢুকে ভেতরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চেয়ারে বসে ডায়েরিটা পড়া আরম্ভ করলাম। প্রথম পাতাটা পরে মনে যে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে তা যদি সত্যি হয় তবে এ ডায়েরি অমূল্য। পড়তে পড়তে অনেকটা রাত হয়ে গেলো, ঘড়ির কাঁটা নিস্তব্ধ রাত্রে বলে চললো টিক টিক টিক।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে....)
Valo
 
পর্ব -১

অন্যদিনের মতো সেদিনও গিয়েছিলাম অঙ্কনের বাড়ি। অঙ্কন আর আমি স্কুল লাইফের ক্লাসমেট। তারপর একই ইয়ারে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন দুজনেই সাহিত্যচর্চা করছি। তবে আজকাল এ পাড়ায় ওর বেশ নামডাক হয়েছে বটে একজন উঁচু দরের সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে। অঙ্কন জমিদার বংশের সন্তান। অর্থাভাবের সম্মুখীন কখনো হতে হয়নি আর সম্ভবত কখনো হতেও হবেনা তাকে । এখন কলকাতায় বাস করলেও তার আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের এক মফস্বল অঞ্চলে, সেখানেই থাকেন তার মা বাবা, কিন্তু পড়াশোনার সূত্রে তাকে এখানে থাকতে হতো। এখন অবিশ্যি কলকাতা ছাড়তে মন চায়না বলেই এখানেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে । তো সেই গ্রামের জমিদারদের বংশধর আমাদের অঙ্কন। কিছু চেয়ে না পাওয়ার অভ্যেসটা তার নেই। পিতৃপুরুষের টাকায় বেশ আয়েশ করে দিন চলে যায় বলে, কখনো কোনো চাকরি বা ব্যবসা করে খেটে অর্থ উপার্জন করার কথা চিন্তাই করতে হয়নি তাকে। আরাম আর ঐশ্বর্যের অভাব না হলেও সারাদিন শুয়ে বসে কাটানোটা যথেষ্ট অস্বস্তিকর তার কাছে। সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের মানুষদের একটা ইউনিক হবি থাকেই। অঙ্কনেরও আছে। আর তা হলো উঁচু দরের সাহিত্যগুন সম্পন্ন পুস্তকাদি জোগাড় করে তার লাইব্রেরীর শোভা বৃদ্ধি করা। সাহিত্য সম্পর্কে বিশেষ কোনো জ্ঞানই যে তার নেই সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত। কিন্তু যারা তার বিষয়ে জানে না, তাদের কাছে বিশেষ কিছু পরিচিত সাহিত্যিকদের উক্তিকে নিজের মতো করে সাজিয়ে এমন ভাবে উপস্থাপন করে অঙ্কন যে বোঝার কোনো উপায়ই থাকে না তার সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞানের দৌড় ঠিক কতটা। যতগুলো বই তার সংগ্রহে আছে তার মধ্যে সে নিজে যে কতগুলো পড়েছে আদৌ একটাও পড়েছে কিনা তা নিয়েও আমি যথেষ্ট সন্দিহান। কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য আমি করিনা কারণ বহুক্ষেত্রে আমার এই বন্ধুটির দ্বারস্থ হতে হয় আর্থিক সমস্যার ক্ষেত্রে। তবে আর যাই হোক ছেলেটা দিলখোলা বটে। কখনো কোনো সমস্যায় পড়লে আমায় একদিনও ফিরিয়ে দেয়নি সে। বরং প্রয়োজনের বেশি দিয়েই সাহায্য করেছে। তো এই অঙ্কনের আজকাল নামডাক হওয়ায় প্রায় রোজ ই তার বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকে। রোজই কেউ না কেউ আসে তার লাইব্রেরী দেখতে। আর অঙ্কনও বুক ফুলিয়ে তার বিপুল সংগ্রহের নমুনা পেশ করে। তবে আজকাল তার আবার অন্য একটা শখ জেগেছে। প্রত্যেক জমিদারদের রক্তে হয়তো এই শখ বর্তমান। সন্ধায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবার শখ। আমাদেরই কলেজের ফ্রেন্ড সার্কেলের কয়েকটি বন্ধু সাহিত্য নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলো। তো তাদের সাথেই যোগাযোগ করে প্রতিদিনই একটা সান্ধ্য সাহিত্যচর্চার আয়োজন করলে সে। নিশ্চিতভাবে সেই আড্ডায় আমিও ছিলাম একজন সদস্য। বিশেষ কিছু নিয়ে নয়, এই পুরনো কলেজের গল্প, কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার গল্প, আবার মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক কথাবার্তায় জমে উঠতো আড্ডা। সেদিন আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল ভুত, যেটা বাঙালিদের অত্যন্ত প্রিয় একটা চর্চার বিষয়। ভুত আছে কি না সে সম্পর্কে তর্ক যখন তুঙ্গে তখন আমি অঙ্কনের লাইব্রেরীর কিছু বই দেখতে ব্যস্ত। আমার ব্যক্তিগতভাবে এই ভুত বিষয়টা খুবই অপছন্দের। তাই এসব নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতেও দ্বিধাবোধ করি। এসব ভাবতে ভাবতেই বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছি হঠাৎ চোখে পড়লো মোটা মোটা কয়েকটা বিদেশী বইয়ের ফাঁকে লাল কাপড়ে বাঁধানো একটা অপেক্ষাকৃত পাতলা গোছের বইটা। সেটা বের করতেই বুঝতে পারলাম যে বই নয়, সেটা একটা ডায়েরি। এত বড়োসড়ো মাপের লাইব্রেরীতে একটা সামান্য ডায়েরি কেনো রাখা সেটা ভেবে বের করতেই মিনিট পাঁচেক কেটে গেলো তবে কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর পেলাম না। তারপর ডায়েরিটা বাম হাতে ধরে অতি সযত্নে ডান হাতে প্রথম পাতাটা খুললাম। নাহ্, কোনো নাম নেই ডায়েরিতে। তবে এ ডায়েরি যে অঙ্কনের নয় সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত কারণ ডায়েরি লেখার অভেস তার নেই। তাহলে এটা কার ডায়েরি। আর যার ই ডায়েরি হোক এটা অঙ্কন কোথা থেকে পেলো সেসব ভাবতে ভাবতেই ডায়েরির পরের পাতাটা খুলে ফেললাম। সম্পূর্ণটাই ইংরেজি ভাষায় লেখা তবে কিছু বিশেষ শব্দের ক্ষেত্রে পর্তুগিজ ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বেশ পরিষ্কার হস্তাক্ষর। আনমনে পড়তে শুরু করলাম।
19th May, 1734
পুরনো ডায়েরিটা এখানে আনতে ভুলে গেছি তাই নতুন ডায়েরি কিনে লিখতে হচ্ছে। আজই জঙ্গলে পৌঁছলাম আমরা। ব্রাজিলের এই অ্যামাজন কেনো এত বিখ্যাত আর চর্চিত বিষয় তা এখানে এসে বেশ বুঝতে পারছি। জঙ্গল এত ঘন আর অন্ধকার যে দিন আর রাতের পার্থক্য বুঝে ওঠা বেশ বিভ্রান্তিকর।
আমি, ডক্টর স্যাঙ্গফ্রইড আর প্রফেসর ডানকান এখানে মূলত ফ্লোরেস ডর্মিন্ডোর খোঁজেই এসেছি। ইংরেজিতে যাকে বলে স্লীপিং ফ্লাওয়ার। এই ফুলের বিশেষত্ব হলো যেকোনো ডিপ্রেসন বা ইনসমনিয়ার পেশেন্টকে অতি সহজেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা এর আছে। ঘুমের ওষুধেও হয়তো সে কাজ হয়ে যায় কিন্তু তার তুলনায় এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী আর তার থেকেও বড়ো বিষয় এর কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। সেই ফুলের খোঁজই আমাদের অ্যামাজনে আসার আসল উদ্দেশ্য। আজ সবাই ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো। কাল থেকে শুরু হবে আমাদের রিসার্চ।

- ভাই অঙ্কন, এই ডায়েরিটা তুই কত্থেকে পেলি রে?
আড্ডার শেষে সবাই চলে গেলে আমি অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করলাম।
- কোন ডায়েরী?
ওর হাতে ডায়েরিটা দিলাম।
- ওহ্ এইটা! এটা আমি একটা অকশন থেকে কিনেছিলাম। ব্রাজিলের কোন এক মিউজিয়াম ভাঙ্গা হয়েছিলো আর সেখান থেকে অনেক জিনিস এই কলকাতায় আনা হয়েছিলো অকশনের জন্য । সেখানে এই লাইব্রেরীর উপযোগী বিশেষ কিছু পাচ্ছিলাম না। আর কোনো অকশনে সম্পূর্ণ খালি হাতে ফিরে আসাটা আমার নীতিবিরুদ্ধ । তাই এটা নিলামে উঠতেই হাঁক পাড়লাম, সস্তায় পেয়েও গেলাম। কিন্তু তুই জানতে চাইছিস কেনো বলতো?
- না তেমন কিছু নয়, এটা রাখা যেতে পারে কয়েকটা দিনের জন্য?
- হুঁ তা রাখ, তবে ব্যাপার টা কি বলতো ভাই?
- ডায়েরিটা বেশ ইন্টারেস্টিং একটু স্টাডি করে তোকে জানাবো বুঝলি। আজ আসি।
বলেই ডায়েরিটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এলাম। তখন ঘড়িতে প্রায় দশটা। মা খেতে ডাকলেন তাই বইটা আমার স্টাডি টেবিলের ড্রয়ারে রেখে খেতে চলে গেলাম।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘরে ঢুকে ভেতরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চেয়ারে বসে ডায়েরিটা পড়া আরম্ভ করলাম। প্রথম পাতাটা পরে মনে যে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে তা যদি সত্যি হয় তবে এ ডায়েরি অমূল্য। পড়তে পড়তে অনেকটা রাত হয়ে গেলো, ঘড়ির কাঁটা নিস্তব্ধ রাত্রে বলে চললো টিক টিক টিক।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে....)
Korechhis ki bachcha! Ekta post i ato boro? 12 yrs lagbe to badge er jonne qualify korte.
 
পর্ব -১

অন্যদিনের মতো সেদিনও গিয়েছিলাম অঙ্কনের বাড়ি। অঙ্কন আর আমি স্কুল লাইফের ক্লাসমেট। তারপর একই ইয়ারে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন দুজনেই সাহিত্যচর্চা করছি। তবে আজকাল এ পাড়ায় ওর বেশ নামডাক হয়েছে বটে একজন উঁচু দরের সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে। অঙ্কন জমিদার বংশের সন্তান। অর্থাভাবের সম্মুখীন কখনো হতে হয়নি আর সম্ভবত কখনো হতেও হবেনা তাকে । এখন কলকাতায় বাস করলেও তার আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের এক মফস্বল অঞ্চলে, সেখানেই থাকেন তার মা বাবা, কিন্তু পড়াশোনার সূত্রে তাকে এখানে থাকতে হতো। এখন অবিশ্যি কলকাতা ছাড়তে মন চায়না বলেই এখানেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে । তো সেই গ্রামের জমিদারদের বংশধর আমাদের অঙ্কন। কিছু চেয়ে না পাওয়ার অভ্যেসটা তার নেই। পিতৃপুরুষের টাকায় বেশ আয়েশ করে দিন চলে যায় বলে, কখনো কোনো চাকরি বা ব্যবসা করে খেটে অর্থ উপার্জন করার কথা চিন্তাই করতে হয়নি তাকে। আরাম আর ঐশ্বর্যের অভাব না হলেও সারাদিন শুয়ে বসে কাটানোটা যথেষ্ট অস্বস্তিকর তার কাছে। সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের মানুষদের একটা ইউনিক হবি থাকেই। অঙ্কনেরও আছে। আর তা হলো উঁচু দরের সাহিত্যগুন সম্পন্ন পুস্তকাদি জোগাড় করে তার লাইব্রেরীর শোভা বৃদ্ধি করা। সাহিত্য সম্পর্কে বিশেষ কোনো জ্ঞানই যে তার নেই সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত। কিন্তু যারা তার বিষয়ে জানে না, তাদের কাছে বিশেষ কিছু পরিচিত সাহিত্যিকদের উক্তিকে নিজের মতো করে সাজিয়ে এমন ভাবে উপস্থাপন করে অঙ্কন যে বোঝার কোনো উপায়ই থাকে না তার সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞানের দৌড় ঠিক কতটা। যতগুলো বই তার সংগ্রহে আছে তার মধ্যে সে নিজে যে কতগুলো পড়েছে আদৌ একটাও পড়েছে কিনা তা নিয়েও আমি যথেষ্ট সন্দিহান। কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য আমি করিনা কারণ বহুক্ষেত্রে আমার এই বন্ধুটির দ্বারস্থ হতে হয় আর্থিক সমস্যার ক্ষেত্রে। তবে আর যাই হোক ছেলেটা দিলখোলা বটে। কখনো কোনো সমস্যায় পড়লে আমায় একদিনও ফিরিয়ে দেয়নি সে। বরং প্রয়োজনের বেশি দিয়েই সাহায্য করেছে। তো এই অঙ্কনের আজকাল নামডাক হওয়ায় প্রায় রোজ ই তার বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকে। রোজই কেউ না কেউ আসে তার লাইব্রেরী দেখতে। আর অঙ্কনও বুক ফুলিয়ে তার বিপুল সংগ্রহের নমুনা পেশ করে। তবে আজকাল তার আবার অন্য একটা শখ জেগেছে। প্রত্যেক জমিদারদের রক্তে হয়তো এই শখ বর্তমান। সন্ধায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবার শখ। আমাদেরই কলেজের ফ্রেন্ড সার্কেলের কয়েকটি বন্ধু সাহিত্য নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলো। তো তাদের সাথেই যোগাযোগ করে প্রতিদিনই একটা সান্ধ্য সাহিত্যচর্চার আয়োজন করলে সে। নিশ্চিতভাবে সেই আড্ডায় আমিও ছিলাম একজন সদস্য। বিশেষ কিছু নিয়ে নয়, এই পুরনো কলেজের গল্প, কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার গল্প, আবার মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক কথাবার্তায় জমে উঠতো আড্ডা। সেদিন আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল ভুত, যেটা বাঙালিদের অত্যন্ত প্রিয় একটা চর্চার বিষয়। ভুত আছে কি না সে সম্পর্কে তর্ক যখন তুঙ্গে তখন আমি অঙ্কনের লাইব্রেরীর কিছু বই দেখতে ব্যস্ত। আমার ব্যক্তিগতভাবে এই ভুত বিষয়টা খুবই অপছন্দের। তাই এসব নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতেও দ্বিধাবোধ করি। এসব ভাবতে ভাবতেই বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছি হঠাৎ চোখে পড়লো মোটা মোটা কয়েকটা বিদেশী বইয়ের ফাঁকে লাল কাপড়ে বাঁধানো একটা অপেক্ষাকৃত পাতলা গোছের বইটা। সেটা বের করতেই বুঝতে পারলাম যে বই নয়, সেটা একটা ডায়েরি। এত বড়োসড়ো মাপের লাইব্রেরীতে একটা সামান্য ডায়েরি কেনো রাখা সেটা ভেবে বের করতেই মিনিট পাঁচেক কেটে গেলো তবে কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর পেলাম না। তারপর ডায়েরিটা বাম হাতে ধরে অতি সযত্নে ডান হাতে প্রথম পাতাটা খুললাম। নাহ্, কোনো নাম নেই ডায়েরিতে। তবে এ ডায়েরি যে অঙ্কনের নয় সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত কারণ ডায়েরি লেখার অভেস তার নেই। তাহলে এটা কার ডায়েরি। আর যার ই ডায়েরি হোক এটা অঙ্কন কোথা থেকে পেলো সেসব ভাবতে ভাবতেই ডায়েরির পরের পাতাটা খুলে ফেললাম। সম্পূর্ণটাই ইংরেজি ভাষায় লেখা তবে কিছু বিশেষ শব্দের ক্ষেত্রে পর্তুগিজ ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বেশ পরিষ্কার হস্তাক্ষর। আনমনে পড়তে শুরু করলাম।
19th May, 1734
পুরনো ডায়েরিটা এখানে আনতে ভুলে গেছি তাই নতুন ডায়েরি কিনে লিখতে হচ্ছে। আজই জঙ্গলে পৌঁছলাম আমরা। ব্রাজিলের এই অ্যামাজন কেনো এত বিখ্যাত আর চর্চিত বিষয় তা এখানে এসে বেশ বুঝতে পারছি। জঙ্গল এত ঘন আর অন্ধকার যে দিন আর রাতের পার্থক্য বুঝে ওঠা বেশ বিভ্রান্তিকর।
আমি, ডক্টর স্যাঙ্গফ্রইড আর প্রফেসর ডানকান এখানে মূলত ফ্লোরেস ডর্মিন্ডোর খোঁজেই এসেছি। ইংরেজিতে যাকে বলে স্লীপিং ফ্লাওয়ার। এই ফুলের বিশেষত্ব হলো যেকোনো ডিপ্রেসন বা ইনসমনিয়ার পেশেন্টকে অতি সহজেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা এর আছে। ঘুমের ওষুধেও হয়তো সে কাজ হয়ে যায় কিন্তু তার তুলনায় এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী আর তার থেকেও বড়ো বিষয় এর কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। সেই ফুলের খোঁজই আমাদের অ্যামাজনে আসার আসল উদ্দেশ্য। আজ সবাই ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো। কাল থেকে শুরু হবে আমাদের রিসার্চ।

- ভাই অঙ্কন, এই ডায়েরিটা তুই কত্থেকে পেলি রে?
আড্ডার শেষে সবাই চলে গেলে আমি অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করলাম।
- কোন ডায়েরী?
ওর হাতে ডায়েরিটা দিলাম।
- ওহ্ এইটা! এটা আমি একটা অকশন থেকে কিনেছিলাম। ব্রাজিলের কোন এক মিউজিয়াম ভাঙ্গা হয়েছিলো আর সেখান থেকে অনেক জিনিস এই কলকাতায় আনা হয়েছিলো অকশনের জন্য । সেখানে এই লাইব্রেরীর উপযোগী বিশেষ কিছু পাচ্ছিলাম না। আর কোনো অকশনে সম্পূর্ণ খালি হাতে ফিরে আসাটা আমার নীতিবিরুদ্ধ । তাই এটা নিলামে উঠতেই হাঁক পাড়লাম, সস্তায় পেয়েও গেলাম। কিন্তু তুই জানতে চাইছিস কেনো বলতো?
- না তেমন কিছু নয়, এটা রাখা যেতে পারে কয়েকটা দিনের জন্য?
- হুঁ তা রাখ, তবে ব্যাপার টা কি বলতো ভাই?
- ডায়েরিটা বেশ ইন্টারেস্টিং একটু স্টাডি করে তোকে জানাবো বুঝলি। আজ আসি।
বলেই ডায়েরিটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এলাম। তখন ঘড়িতে প্রায় দশটা। মা খেতে ডাকলেন তাই বইটা আমার স্টাডি টেবিলের ড্রয়ারে রেখে খেতে চলে গেলাম।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘরে ঢুকে ভেতরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চেয়ারে বসে ডায়েরিটা পড়া আরম্ভ করলাম। প্রথম পাতাটা পরে মনে যে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে তা যদি সত্যি হয় তবে এ ডায়েরি অমূল্য। পড়তে পড়তে অনেকটা রাত হয়ে গেলো, ঘড়ির কাঁটা নিস্তব্ধ রাত্রে বলে চললো টিক টিক টিক।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে....)
U r doing good. Tor hobe.
 
পর্ব -১

অন্যদিনের মতো সেদিনও গিয়েছিলাম অঙ্কনের বাড়ি। অঙ্কন আর আমি স্কুল লাইফের ক্লাসমেট। তারপর একই ইয়ারে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন দুজনেই সাহিত্যচর্চা করছি। তবে আজকাল এ পাড়ায় ওর বেশ নামডাক হয়েছে বটে একজন উঁচু দরের সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে। অঙ্কন জমিদার বংশের সন্তান। অর্থাভাবের সম্মুখীন কখনো হতে হয়নি আর সম্ভবত কখনো হতেও হবেনা তাকে । এখন কলকাতায় বাস করলেও তার আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের এক মফস্বল অঞ্চলে, সেখানেই থাকেন তার মা বাবা, কিন্তু পড়াশোনার সূত্রে তাকে এখানে থাকতে হতো। এখন অবিশ্যি কলকাতা ছাড়তে মন চায়না বলেই এখানেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে । তো সেই গ্রামের জমিদারদের বংশধর আমাদের অঙ্কন। কিছু চেয়ে না পাওয়ার অভ্যেসটা তার নেই। পিতৃপুরুষের টাকায় বেশ আয়েশ করে দিন চলে যায় বলে, কখনো কোনো চাকরি বা ব্যবসা করে খেটে অর্থ উপার্জন করার কথা চিন্তাই করতে হয়নি তাকে। আরাম আর ঐশ্বর্যের অভাব না হলেও সারাদিন শুয়ে বসে কাটানোটা যথেষ্ট অস্বস্তিকর তার কাছে। সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের মানুষদের একটা ইউনিক হবি থাকেই। অঙ্কনেরও আছে। আর তা হলো উঁচু দরের সাহিত্যগুন সম্পন্ন পুস্তকাদি জোগাড় করে তার লাইব্রেরীর শোভা বৃদ্ধি করা। সাহিত্য সম্পর্কে বিশেষ কোনো জ্ঞানই যে তার নেই সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত। কিন্তু যারা তার বিষয়ে জানে না, তাদের কাছে বিশেষ কিছু পরিচিত সাহিত্যিকদের উক্তিকে নিজের মতো করে সাজিয়ে এমন ভাবে উপস্থাপন করে অঙ্কন যে বোঝার কোনো উপায়ই থাকে না তার সাহিত্য সম্পর্কে জ্ঞানের দৌড় ঠিক কতটা। যতগুলো বই তার সংগ্রহে আছে তার মধ্যে সে নিজে যে কতগুলো পড়েছে আদৌ একটাও পড়েছে কিনা তা নিয়েও আমি যথেষ্ট সন্দিহান। কিন্তু এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য আমি করিনা কারণ বহুক্ষেত্রে আমার এই বন্ধুটির দ্বারস্থ হতে হয় আর্থিক সমস্যার ক্ষেত্রে। তবে আর যাই হোক ছেলেটা দিলখোলা বটে। কখনো কোনো সমস্যায় পড়লে আমায় একদিনও ফিরিয়ে দেয়নি সে। বরং প্রয়োজনের বেশি দিয়েই সাহায্য করেছে। তো এই অঙ্কনের আজকাল নামডাক হওয়ায় প্রায় রোজ ই তার বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকে। রোজই কেউ না কেউ আসে তার লাইব্রেরী দেখতে। আর অঙ্কনও বুক ফুলিয়ে তার বিপুল সংগ্রহের নমুনা পেশ করে। তবে আজকাল তার আবার অন্য একটা শখ জেগেছে। প্রত্যেক জমিদারদের রক্তে হয়তো এই শখ বর্তমান। সন্ধায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেবার শখ। আমাদেরই কলেজের ফ্রেন্ড সার্কেলের কয়েকটি বন্ধু সাহিত্য নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলো। তো তাদের সাথেই যোগাযোগ করে প্রতিদিনই একটা সান্ধ্য সাহিত্যচর্চার আয়োজন করলে সে। নিশ্চিতভাবে সেই আড্ডায় আমিও ছিলাম একজন সদস্য। বিশেষ কিছু নিয়ে নয়, এই পুরনো কলেজের গল্প, কিছু অদ্ভুত অভিজ্ঞতার গল্প, আবার মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক কথাবার্তায় জমে উঠতো আড্ডা। সেদিন আড্ডার বিষয়বস্তু ছিল ভুত, যেটা বাঙালিদের অত্যন্ত প্রিয় একটা চর্চার বিষয়। ভুত আছে কি না সে সম্পর্কে তর্ক যখন তুঙ্গে তখন আমি অঙ্কনের লাইব্রেরীর কিছু বই দেখতে ব্যস্ত। আমার ব্যক্তিগতভাবে এই ভুত বিষয়টা খুবই অপছন্দের। তাই এসব নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতেও দ্বিধাবোধ করি। এসব ভাবতে ভাবতেই বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছি হঠাৎ চোখে পড়লো মোটা মোটা কয়েকটা বিদেশী বইয়ের ফাঁকে লাল কাপড়ে বাঁধানো একটা অপেক্ষাকৃত পাতলা গোছের বইটা। সেটা বের করতেই বুঝতে পারলাম যে বই নয়, সেটা একটা ডায়েরি। এত বড়োসড়ো মাপের লাইব্রেরীতে একটা সামান্য ডায়েরি কেনো রাখা সেটা ভেবে বের করতেই মিনিট পাঁচেক কেটে গেলো তবে কোনো যুক্তিযুক্ত উত্তর পেলাম না। তারপর ডায়েরিটা বাম হাতে ধরে অতি সযত্নে ডান হাতে প্রথম পাতাটা খুললাম। নাহ্, কোনো নাম নেই ডায়েরিতে। তবে এ ডায়েরি যে অঙ্কনের নয় সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত কারণ ডায়েরি লেখার অভেস তার নেই। তাহলে এটা কার ডায়েরি। আর যার ই ডায়েরি হোক এটা অঙ্কন কোথা থেকে পেলো সেসব ভাবতে ভাবতেই ডায়েরির পরের পাতাটা খুলে ফেললাম। সম্পূর্ণটাই ইংরেজি ভাষায় লেখা তবে কিছু বিশেষ শব্দের ক্ষেত্রে পর্তুগিজ ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বেশ পরিষ্কার হস্তাক্ষর। আনমনে পড়তে শুরু করলাম।
19th May, 1734
পুরনো ডায়েরিটা এখানে আনতে ভুলে গেছি তাই নতুন ডায়েরি কিনে লিখতে হচ্ছে। আজই জঙ্গলে পৌঁছলাম আমরা। ব্রাজিলের এই অ্যামাজন কেনো এত বিখ্যাত আর চর্চিত বিষয় তা এখানে এসে বেশ বুঝতে পারছি। জঙ্গল এত ঘন আর অন্ধকার যে দিন আর রাতের পার্থক্য বুঝে ওঠা বেশ বিভ্রান্তিকর।
আমি, ডক্টর স্যাঙ্গফ্রইড আর প্রফেসর ডানকান এখানে মূলত ফ্লোরেস ডর্মিন্ডোর খোঁজেই এসেছি। ইংরেজিতে যাকে বলে স্লীপিং ফ্লাওয়ার। এই ফুলের বিশেষত্ব হলো যেকোনো ডিপ্রেসন বা ইনসমনিয়ার পেশেন্টকে অতি সহজেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেওয়ার ক্ষমতা এর আছে। ঘুমের ওষুধেও হয়তো সে কাজ হয়ে যায় কিন্তু তার তুলনায় এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী আর তার থেকেও বড়ো বিষয় এর কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। সেই ফুলের খোঁজই আমাদের অ্যামাজনে আসার আসল উদ্দেশ্য। আজ সবাই ক্লান্ত তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো। কাল থেকে শুরু হবে আমাদের রিসার্চ।

- ভাই অঙ্কন, এই ডায়েরিটা তুই কত্থেকে পেলি রে?
আড্ডার শেষে সবাই চলে গেলে আমি অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করলাম।
- কোন ডায়েরী?
ওর হাতে ডায়েরিটা দিলাম।
- ওহ্ এইটা! এটা আমি একটা অকশন থেকে কিনেছিলাম। ব্রাজিলের কোন এক মিউজিয়াম ভাঙ্গা হয়েছিলো আর সেখান থেকে অনেক জিনিস এই কলকাতায় আনা হয়েছিলো অকশনের জন্য । সেখানে এই লাইব্রেরীর উপযোগী বিশেষ কিছু পাচ্ছিলাম না। আর কোনো অকশনে সম্পূর্ণ খালি হাতে ফিরে আসাটা আমার নীতিবিরুদ্ধ । তাই এটা নিলামে উঠতেই হাঁক পাড়লাম, সস্তায় পেয়েও গেলাম। কিন্তু তুই জানতে চাইছিস কেনো বলতো?
- না তেমন কিছু নয়, এটা রাখা যেতে পারে কয়েকটা দিনের জন্য?
- হুঁ তা রাখ, তবে ব্যাপার টা কি বলতো ভাই?
- ডায়েরিটা বেশ ইন্টারেস্টিং একটু স্টাডি করে তোকে জানাবো বুঝলি। আজ আসি।
বলেই ডায়েরিটা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এলাম। তখন ঘড়িতে প্রায় দশটা। মা খেতে ডাকলেন তাই বইটা আমার স্টাডি টেবিলের ড্রয়ারে রেখে খেতে চলে গেলাম।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘরে ঢুকে ভেতরে থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চেয়ারে বসে ডায়েরিটা পড়া আরম্ভ করলাম। প্রথম পাতাটা পরে মনে যে আশঙ্কা দানা বেঁধেছে তা যদি সত্যি হয় তবে এ ডায়েরি অমূল্য। পড়তে পড়তে অনেকটা রাত হয়ে গেলো, ঘড়ির কাঁটা নিস্তব্ধ রাত্রে বলে চললো টিক টিক টিক।
(পরবর্তী অংশ পরের পর্বে....)
good, go forward:Like:
 
Top