পর্ব ৯
ইন্দ্রদা ইন্সপেক্টরকে আটকালো, "দেখুন বনের অলিগলি রাস্তা আমাদের অজানা। ওকে ধরবার বৃথা চেষ্টা না করে আসুন দেখি কোনো ক্লু রেখে গেছে কিনা?"
আমাদের জিপের সামনের কাঁচটায় যেখানে ধুলো পড়েছিল সেখানে কে যেন বড় করে লিখে দিয়ে গেছে 'সা ব ধা ন!' আমি গাড়ির সামনে দেখতে পেলাম পানের পিক ফেলা রয়েছে। দীপেনবাবুকে সকালে লক্ষ্য করেছিলাম, ঠোট আর দাঁতগুলো অসম্ভব লাল।
"বুঝতে পারছিস?" ইন্দ্রদা বলল।
"হ্যাঁ। দীপেনবাবু!"
"Right! চলুন রায়বাবু এবার ফেরা যাক।"
স্নান খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেছে। ইন্দ্রদা আর সায়ন রায় বারান্দায় বসে গল্প করছিল। আমি বিছানায় শুয়েছিলাম। ডাকবাংলোয় দেখে আসা একটা জিনিস তখনও আমার মনে খটকা দিচ্ছিল। মনে-মনে ভাবতে শুরু করলাম সেই প্রথম রাতের নারী কণ্ঠের ছড়াটা সম্পর্কে, ওটাই নিশ্চয় সংকেত। কি যেন বলছিল? সাত সাগর আর বারো নদী, হয় কিন্তু তেরো নদী; বারো বলল কেন? সাত-সাত-সাত, পাঁচ-পাঁচ; না মেলাতে পারছি না। নীলকমলের নীল কাঁটা আর লালকমলের লাল কাঁটা, কাঁটা আনতে হবে সাত সাগর আর বারো নদী পেরিয়ে, তেরো নয়, তবে কি আমি যেটা ভাবছি সেটাই?
বাইরে সায়ন রায়ের গলা কানে এল, "আমি এখন আসি ইন্দ্রজিৎ বাবু। বিকেলে আসবো। দুপুরে ডাকবাংলোর ঐ ঘরটা search করতে হবে।"
ইন্দ্রদা ঘরে ঢোকার পর বললাম, "তুমি কি মনে করো ডাকবাংলোয় ঐ রুমটায় গোপনীয় কিছু আছে?"
"I am sure ঐ রুমে কিছু পাওয়া যাবে না।"
"তাহলে তখন যে বললে something secret?"
ইন্দ্রদা হাসল, "রহস্য তো অবশ্যই আছে।"
"আচ্ছা গুপ্তধনের ব্যাপারে তো তুমি ভাবছই না?"
"সে নিয়ে তো তুই ভাবছিস, আর মনে হয় তার সমাধানও হয়ে গেছে।"
"তুমি কি করে বুঝলে?"
"সৌম্য, মানুষের face অনেক সময় অনেক কিছু বলে দেয়। তুই আর একটু বড় হ, তুইও পারবি face reading করতে। সমাধানটা পরে শুনবো। কাউকে বলিস না এ ব্যাপারে।"
বিকেলে ইন্সপেক্টর রায় কথামতো চলে এলেন, "আমার ধারনাই ঠিক। ঐ বাংলোর ঘরে কিছু পাওয়া গেল না। শুধু-শুধু নোংরা ঘাঁটা।"
"আমি এমনটাই আন্দাজ করেছিলাম।"
"মনে? তাহলে এত খাটা-খাটনির কি মানে?" ইন্সপেক্টর রায় কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন।
আমাদের বেরোতে ছ'টা বেজে গেল। ইন্দ্রদা আর আমি তখন শার্টটা গায়ে চাপাচ্ছিলাম। বাইরে থেকে সায়ন রায় ডাকছেন, " কি হল আসুন। দেরি হয়ে যাচ্ছে, আসুন।"
ভয়ংকর লাশ
"আসুন-আসুন। কিন্তু কি হয়েছে বলুন তো?" ত্রিলোকনাথ মুখুজ্জে বলে উঠলেন। আমার তখন ওনার বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। বাড়িটা একতলা হলেও বেশ সুন্দর। বাইরে ফুলবাগান। একজন মালী হাঁ করে তাকিয়েছিল। আমরা ভেতরে ঢুকলাম।
সায়ন রায় বললেন, "আমরা থানা থেকে আসছি, ত্রিলোকবাবু, ঐ ডাকবাংলোটার তদন্তের ব্যাপারে।"
ত্রিলোকবাবু আমাদের যথেষ্ট আপ্যায়ন করলেন। পুরু গদি-ওয়ালা সোফাতে আমরা তিনজন বসলাম, উনি একটা single সোফায়। প্রথমে গেল পরিচয় পর্ব। উনি একটা চাকরকে ডেকে বললেন, "কাশী, এনারা এসেছেন। ভালো করে চার কাপ কফি করে নিয়ে আয়। আপনাদের কফি চলে তো?"
ইন্সপেক্টর রায় বললেন, "আপনি এ গ্রামের chief, তাই তো?"
"হ্যাঁ। আমি আপনাদের আসার খবর আগেই পেয়েছি। ঐ ডাকবাংলোটার রহস্যের সমাধান হোক আমিও চাই। যতসব গায়োঁ ভুতগুলো, ঐ বাড়িতে নাকি প্রেতাত্মার বাস।"
"কিন্তু পরপর যে murder গুলো হচ্ছে সে ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?"
"হতে পারে panic ছড়ানোর জন্য কেউ..."
"কিন্তু এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু!"
"সেটা তো আপনাদের duty। দেখুন কয়েকদিন আগের একটা ঘটনা বলি। আমি আর আমার এক বন্ধু ঐ বাড়িতে রাত্রে যাই। দেখতে পেয়েছিলাম একটা বীভৎস মুখ, কালো রোমশ হাত। দেখুন আমি এত সহজে ভয় পাবার লোক নই। সে রাতে আমি শেষ না দেখে ফিরতাম না। কিন্তু আমার ঐ ভীতু বন্ধুর জন্য আসতে হল।"
"আপনার বন্ধু থাকেন কোথায়?" ইন্দ্রদার প্রশ্ন।
"কোলকাতায়। ঐ ঘটনার পর আর গ্রামে আসে নি। আর একটা কথা, সেখানে শুনতে পেয়েছিলাম একটা ছড়া। ঠিক কি তা মনে নেই।"
"ওটা গুপ্তধনের সংকেত," আমি বললাম।
"হ্যাঁ আমিও শুনেছি গ্রামের লোকেদের মুখে। যত সব আজগুবি গাল-গল্প। নিশ্চয়ই এর পেছনে কারোর হাত আছে। দেখুন যারা ঐ বাড়িতে ঢুকেছে তারা নাকি কয়েকদিন পর মারা গাছে বলে শোনা যায়। কিন্তু কই আমার তো কিছু হল না?"
চাকরিটা কফি দিয়ে গেল। কাশীর চোখটা চোখটা বীভৎস রকম ফোলা, মনে হয় এইমাত্র boxing খেলায় মার খেয়ে এসেছে। কফির ট্রে-টা রেখে ও নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল। বাইরে তখন সূর্যের লালিমা দিকচক্রবাল থেকে মুছে গেছে। আকাশটা ছাড়া সবই নিকষ কালো দেখাচ্ছে। আমরা যেখানে বসে রয়েছি সে ঘরে টিউব জ্বলছিল। অগোছালো নয়, তবে ঘরের situation দেখে বোঝা যায় ত্রিলোকনাথবাবু bachelor মানুষ। চোখে মুখে আভিজাত্য স্পষ্ট। কাঁচাপাকা চুল মেশানো গোল মাথা, ধবধবে ফর্সা রং, বয়স বড়জোর পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন। ইন্দ্রদা ঘরের চারপাশ ভাল করে লক্ষ্য করছে। ইন্দ্রদা ও সায়ন রায়কে উনি সিগারেট offer করলেন। ইন্সপেক্টর রায় সিগারেট খান না। ইন্দ্রদা আর ত্রিলোকবাবুই সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করলেন। Gold flakeটা শেষ করে শেষ দুটো ধোঁয়ার রিং ছেড়ে ইন্দ্রদা সেটা পরিষ্কার খালি ছাইদানে রাখছে, ঠিক তখনই কাশী, মানে চাকরটা ছুটতে-ছুটতে এসে ঘরে প্রবেশ করল।
"বাবু-বাবু, বাবু বাইরে ভুত!"
---- সংগৃহীত ----

@Anshhi @Bhoot @Uronchondi @Babai_43 @misstti @Ladywiththelamp @Ankita @InkyWhispers @Maity Adi @RitamRoy @ANNA007

@Anshhi @Bhoot @Uronchondi @Babai_43 @misstti @Ladywiththelamp @Ankita @InkyWhispers @Maity Adi @RitamRoy @ANNA007