পর্ব ৭
ইন্দ্রদা বলল," আমরা শুধু জানতে চাই ঐ ডাকবাংলোটাতে আগে কারা থাকতো?"
"দেখুন বলতে আমার আপত্তি নেই, তবে ওদের কথা বললে ওরা অসন্তুষ্ট হয়। আমি আর ক'দিন থাকবো এই পৃথিবীতে, কিন্তু ভয় হয় নয়নের জন্য। যারা ঐ ডাকবাংলো নিয়ে বেশি মাতামাতি করেছে তাদের অবস্থা তো আপনাদের অজানা নয়।"
কৌতূহলবশত ভোলাবাবাকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, " আপনি কি হাঁটাচলা করতে পারেন না?"
"গত দু'মাস থেকে আমি শয্যাশায়ী। বিছানা থেকে উঠতে পারি না। আমি চলে গেলে নয়নটার যে কী হবে? যাক সে কথা, এখন শুনুন, ঐ বাংলো বাড়িটা কমপক্ষে পঞ্চাশ-ষাট বছরের পুরনো। ঐ বাড়িতে থাকতো স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এক পরিবার; প্রচুর ধন সম্পদ ছিল ওদের। আজও অনেকে বলে, ঐ বাংলোটায় কোথাও না-কোথাও গুপ্তধন আছে। দু' একজন যারা কৌতূহলে ঐ বাড়িতে ঢুকেছে তাদের অবস্থা কি হয়েছে আপনারা তো জানেন। আপনারাও সাবধান। যাই-হোক, তারপর একদিন রাতে ঐ বাড়িতে ডাকাত হামলা করে। পরিবারের সবাই ডাকাতের হাতে নিহত হয়। ঐ বাড়ির চাকর পালিয়ে যায়। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারে নি। ডাকাতদের ধারালো বর্শায় ওর পেট এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায়।"
" চাকরটার নাম কি ছিল মনে আছে?" ইন্দ্রদার প্রশ্ন।
" হ্যাঁ, রামনাথ।"
বিস্মিত হতবিহবল হয়ে পড়ি কয়েক মুহূর্তের জন্য। তবে সেই রাতে কে আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল ডাকবাংলোতে?
ইন্সপেক্টর বললেন, "তারপর?"
"তারপর ডাকাতরা সব লুট করে নিয়ে যায়। কিন্তু শুনেছি গুপ্তধন নাকি অজানাই থেকে যায়। আজও অশরীরী সেই পরিবারের গুপ্তধন আগলে চলেছে। যারা ঐ বাড়িতে ঢুকেছে আজ পর্যন্ত তাদের মধ্যে একজন শুধু সশরীরে জীবিত আছে।"
"কে?"
"গ্রাম প্রধান ত্রিলোকনাথ মুখুজ্জে।"
"ওনার ঘরটা কোথায়?"
"আমার জানা আছে," ইন্সপেক্টর বললেন।
ভোলাবাবা আবার বলতে শুরু করলেন, "ঐ ত্রিলোকবাবুর মুখে শুনেছি, উনি এক রাতে ওনার এক বন্ধুর সাথে ঐ ডাকবাংলোয় ঢোকেন ... দেখতে পান ভয়ংকর ছায়া ... শুনতে পান আবছা আধো-আধো স্বরে একটা ছড়া। উনি নাকি বলেছেন ঐটাই গুপ্তধনের ছক। কিন্তু পরে আর কোনোদিন ঐ ব্যাপারে মাথা ঘামান নি।"
"অশেষ ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান তথ্যের জন্য," ইন্দ্রদা বলল।
ভোলাবাবা মৃদু হাসলেন, " আপনারা তদন্ত করেন চিহ্ন বা clue দেখে, এখানে আমার তথ্যের মূল্য কোথায়; কি বলেন ইন্সপেক্টর রায়?"
সবাই হেসে উঠল। আমি হাসলাম না। একটা সন্দেহের পালক মনে সুড়সুড়ি দিচ্ছিল, কতটা সত্যি তা জানি না। আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে এসে ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। ওখান থেকে ইন্সপেক্টরের জিপটা নিয়ে ডাকবাংলোয় যাবো।
ইন্দ্রদা আমাকে আসতে-আসতে বলল," কিছু দেখলি?"
"শুধু দেখলাম না, শুনলামও।"
"তার মানে কিছু কি catch করতে পেরেছিস?"
"হ্যাঁ, মানে আমরা pond এর টাটকা fish catch করেছি। ইন্সপেক্টর রায়ও এখানে খাবেন। আমার মানে-মানে যে কি luck, মানে বলে বোঝাতে পারছি না।"
ঘর পৌঁছে দেখি কয়েকজন চাকর-বাকর নিয়ে ভজহরিবাবু রান্নার তোড়জোড় চালাচ্ছেন। জিপটা নিয়ে আমরা তিনজন ডাকবাংলোর দিকে রওনা দিলাম। সায়ন রায় drive করছিলেন। উনি বললেন, "এই ভজহরি লোকটাকে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ওর কি এতই ভয়, যে, আমাদের সঙ্গে এলো না?"
ইন্দ্রদা কিছু একটা ভাবছিল।
"কিছু ভাবছেন?" সায়ন রায় বলল।
"হ্যাঁ, একটা গুপ্তধনের ছক।"
"দেখুন মিস্টার সান্যাল, গুপ্তধনের কথা জানি না, তবে একটার পর-একটা যে খুন হয়ে যাচ্ছে তার একটা কিনারা হওয়া দরকার। আমি বহু জায়গায় transfer হয়েছি... এরকম case আগে পাই নি। চোখ-কান খোলা রেখে যা করার করতে হবে।"
@Anshhi @Uronchondi @Bhoot @Maity Adi @Babai_43 @Ladywiththelamp @Ankita @misstti @InkyWhispers @ANNA007