• We kindly request chatzozo forum members to follow forum rules to avoid getting a temporary suspension. Do not use non-English languages in the International Sex Chat Discussion section. This section is mainly created for everyone who uses English as their communication language.

◕ কান্না ভেজা ডাকবাংলোর রাত পর্ব - ১১

Sherl0ck

Epic Legend
পর্ব ১১

ঘরে ঢোকার সময় দেখলাম বাইরে আলতার মত লাল রঙের বারান্দায় বসে ভজহরিবাবু আনন্দবাজার পত্রিকা পড়ছেন। জানলা দিয়ে ভেসে আসছে মন্দিরের কাঁসর-ঘণ্টা ধ্বনি। হঠাৎ ভজহরিবাবু ছুটতে-ছুটতে আমাদের ঘরে ঢুকলেন, হাতে রবিবারের সংবাদপত্রটা।

"এই যে ডিটকেটিভ-বাবু, মানে ইয়ে, মানে ইন্দ্রবাবু; কাগজে দেখুন।"

সত্যিই কাগজের দু'নম্বর পাতায় অবাক করে দেবার মত একটা খবর, একটা ছোট্ট ছবি ছাপানো হয়েছে। খবর পড়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল।

"ছবিটি নয়ন সেন নামে এক একুশ বছরের কলেজ ছাত্রীর, ১৩ ই জুন থেকে নিরুদ্দেশ, হারিয়ে যাবার সময় পরনে ছিল আকাশী রঙের চুড়িদার, শাদা ওড়না। সন্ধান পেলে দয়া করে ০৩৩২২৮.... নম্বরে ফোন করবেন।"

ছবিটা যে নয়নের সেটা পরিষ্কার, কিন্তু সব ব্যাপারটা কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ইন্দ্রদা পকেট থেকে ফোন বের করে চট করে নম্বরটা ডায়াল করল, "হ্যালো!"

"হ্যাঁ বলুন।"

"আপনি নিশ্চয়ই নয়নের মা?"

"হ্যাঁ! কিন্তু আপনাকে..."

"আমি private detective from crime branch, নয়নের সন্ধান পাওয়া গেছে।"

"অ্যাঁ! আমার নয়ন কোথায় আছে? কবে? আমাকে কি করতে হবে?"

"আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন! তবে ব্যাপারটা যতটা সম্ভব গোপন রাখবেন।"

"আমার নয়ন ভাল আছে তো?"

"Don’t worry. By the by নয়ন নিরুদ্দেশ হল কিভাবে?"

"একমাস আগে একটা তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে বাবার সাথে ওর ঝগড়া হয়। আর নয়ন খুবই একরোখা। তাই সেদিন কাউকে না বলে ও কোথায় চলে যায় জানতেও পারিনি। পরে কোনও খবরও পাই নি।"

"আচ্ছা নয়নের বাবা?"

"উনি নয়ন চলে যাবার পরের দিনই হার্ট ফেল করে..."

"Sorry, I’m really very sorry. কোনো চিন্তা করবেন না। তবে আবার বলছি জানাজানি যেন না হয়।"

মোবাইলটা কেটে দিয়ে ইন্দ্রদা আর একটা নম্বরে ফোন করল।

"হ্যাঁ আমি ইন্দ্রজিৎ বলছি ... Horrible case, রাত নটা নাগাদ পুরো force নিয়ে আসতে হবে ... সেটা গোপনীয়। এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আচ্ছা সায়ন রায়ের মোবাইল নম্বরটা কত? ... তাহলে time maintain করে আসবেন।"

ভজহরিবাবু তখনও হাঁ করে দাঁড়িয়ে, "আপনাদের কি তাহলে সব রহস্য know হয়ে গেছে? মানে ..."

"মানে আর কিছুই নয়, সবই প্রায় হাতের মুঠোয় ভজহরিবাবু।"

"আমি এখন go." উনি যেন একটু তাড়াহুড়ো করেই বেরিয়ে গেলেন। ভজহরিবাবু চলে যাবার পর ইন্দ্রদা বাইরে বেরোল। বলল একটা tape recorder কিনতে যাচ্ছে। সন্ধ্যে ছ'টায় সায়ন রায় চলে আসার আগেই ইন্দ্রদা ফিরে এল।

◕ ◕

"ইন্দ্রজিৎ-বাবু, I have come in right time."

"হ্যাঁ, আসুন-আসুন।"

"আপনি genious, তবে জানতে ইচ্ছে করছে দীপেনবাবুই যে..."

"কৌতূহল দমন করুন। অপরাধী ধরা পড়লে সবই জানতে পারবেন।"
মুখোশ-ধারী
"দীপেন জানতে যেন না পারে আমরা ওর জন্য ওঁত পেতে বসে আছি।" সায়ন রায় জিপ থেকে নামতে-নামতে বললেন।

জ্যোৎস্নার ছিটেফোঁটা নেই আজ আকাশে। তার ওপর রহস্যময় ডাকবাংলোর ভেতর থেকে অস্বাভাবিক কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। গোটা বাড়িটা আজ অন্ধকার। ইন্দ্রদার টর্চ অনুসরণ করে চলেছি আমি আর সায়ন রায়। আলোহীন বাংলোয় প্রবেশ করতেই অস্বাভাবিক শব্দগুলো মিলিয়ে গেল। ওরা কি আজ তবে ভয় পেয়েছে?

আমি, সায়ন রায় আর ইন্দ্রদা ঘড়ির নিচে এলাম। ইন্দ্রদা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ওনাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল। তারপর ঘড়ির মিনিটের কাঁটা বারোর ঘরে আর ঘণ্টার কাঁটা সাতের ঘরে আনতেই দেওয়াল থেকে ঘড়িটা খুলে এল। তার বদলে দেওয়ালে একটা গর্ত। টর্চ মেরে দেখা গেল চকচকে কতগুলো হীরে। আবার ঘড়িটাকে দেওয়ালে আটকে দিয়ে ইন্দ্রদা বলে উঠল, "চলুন কোথাও আত্মগোপন করে থাকি।"

আমরা এককোণে ড্রেসিং টেবিলের পেছনে রইলাম। ইন্দ্রদা আর ইন্সপেক্টরের হাতে উদ্যত পিস্তল। সব নিস্তব্ধ। ন'টা বাজতে পাঁচ, কেউ আসছে না। ইন্দ্রদার চোখে মুখে উত্তেজনা আর সায়ন রায়ের ক্ষিপ্র দৃষ্টি। একটা তীব্র পচা গন্ধ নাকে আসছিল। হঠাৎ সায়ন রায় ইন্দ্রদাকে সিগারেট অফার করলেন।

"আপনি তো সিগারেট খান না?"

"মাঝে-সাঝে খাই বইকি। তবে পকেটে থাকে, এই যেমন এখন একটা ধরালে মন্দ হবে না।"

ইন্দ্রদাও নিজের brand, gold flake টা পেয়ে বেশ খুশিই হল। অন্ধকারেই বুঝতে পারলাম ও ডান পকেট থেকে লাইটারটা বের করল। গ্যাস-লাইটের আলোর ঝলকানিতে ইন্দ্রদা প্রথমবার ধোঁয়া ছাড়ল। সায়ন রায় অদ্ভুত দৃষ্টিতে ইন্দ্রদার দিকে তাকিয়ে। ইন্দ্রদা হঠাৎ যেন কেমন হয়ে গেল। এবার বুকে হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে ইন্দ্রদা হাঁফাতে শুরু করল, "আমার গলা বু... বুক... কে... কে... কেন এমন হ... হ...হয়ে... যাচ্ছে?"

ইন্দ্রদা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, হাতের সিগারেটটা তখনও ধরা। আমি ইন্দ্রদার বুকের কাছে বসে পড়েছি। পেছন দিক থেকে একটা হাত কালো ফিতে দিয়ে আমার মুখ বেঁধে আমাকে বোবা করে দিল। তারপর থামের কাছে বেঁধে দিতেই আমি পুরো অনড় হয়ে গেলাম।

না না... তা হয় না। চোখ দিয়ে তখন আমার দু'ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে। এবার চোখ গেল আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তচক্ষু সায়ন রায়ের দিকে; অট্টহাসি হাসছে। বিস্ময়ে আমার চোখের জল শুকিয়ে গেছে তখন।

"হ্যাঁ আমি সায়ন রায়, ইন্সপেক্টর সায়ন রায়, রহস্যের উৎস কর্তা, বুঝলি হে ছোকরা? আর তোর ইন্দ্রদা এখন তীব্র হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড সহ্য করতে না পেরে মারা গেছে।"
দুঃখে, জ্বালায়, ভয়ে আমার ঘাম আর চোখের জল এক হয়ে গেল। এই তাহলে ইন্সপেক্টরের আসল মূর্তি। এবার পাশের ঘর থেকে আবির্ভাব হল আরও দুজন। একজন দীপেন গাঙ্গুলি আর একজন বুড়ো ভোলাবাবা, তবে সে এখন বুড়ো নয় জলজ্যান্ত এক নরপিশাচ যুবক, আর সেই রাতের ছদ্মবেশী রামনাথ। সবার অট্টহাসিতে ডাকবাংলোটা গমগম করছে। এবার সব থেকে অবাক লাগল নয়নকে পাশের ঘর থেকে আসতে দেখে। ঘরের লাইট জ্বলে উঠল। আমি অস্ফুট-বদনে নিরুপায় শক্তিহীন হয়ে আবদ্ধ রয়েছি।

হঠাৎ সায়ন রায় গর্জে উঠল, "তোকেও মরতে হবে রে ছোকরা। আর তা না হলে আমাদের পুরো দলটাকে তুই -। চলো ফ্রেন্ডস, শেষ কাঁটাটাকে সরিয়ে দিয়ে আমরা আনন্দ করি।"

নয়ন বলে উঠল, "আপনি ওনাকে ওভাবে মারলেন কেন? ইন্দ্রবাবু তো কোনো দোষ করেন নি, আর মারলেনই বা কিভাবে? যাই-হোক আমি আমার প্রাপ্য টাকা নিয়ে চলে যেতে চাই, প্লিজ আমাকে যেতে দিন।"

দীপেন গাঙ্গুলি বলে উঠল, "খুব তো দরদ দেখছি ডিটেকটিভের জন্য। প্রেমে-টেমে পড়লে নাকি?"

"আমার আর এসমস্ত খুন-খারাপি ভাল লাগছে না। আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে আমাকে যেতে দিন।"

"চলে যাবে! হা…হা…হা, তা তো যাবেই। তবে আজকের রাতটা তো আমাদের সাথে আনন্দ করে যেতে হবে।"

নয়নের দু'চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। সায়ন রায়, দীপেন ও ভোলাবাবা ওরফে রামনাথকে সিগারেট আর বিয়ার দিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে ওরা দুজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আমি অনড়, বোবা হয়ে প্রতীক্ষা করছি নিজের মৃত্যুর।

নয়ন এবার কেঁদে ফেলেছে, "একি! আপনি কি করছেন? এক-এক করে সবাইকে মেরে ..."

"হ্যাঁ নয়ন, ঠিক তাই। সিগারেটের পেছনে তীব্র হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড লাগিয়ে আমি এদের মেরেছি। লভ্যাংশের টাকা, হেরোইনের সমস্ত লাভ এখন আমার। তুমিও বাদ যাবে না নয়ন। এর জন্য আমার পিস্তলের একটা গুলিই যথেষ্ট।"

আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি বাঁধন খোলার। এবার একটা গুলির আওয়াজ; সায়ন রায়ের পিস্তল গেছে ছিটকে। বাইরে পুলিশ ভ্যানের সিগন্যাল। ইন্দ্রদার হাতের রিভলভারের একটা গুলি সায়ন রায়ের পিস্তল ছিটকে দিয়েছে। সায়ন রায় হতভম্ব। ইন্দ্রদা মাটি থেকে উঠে উদ্বত রিভলভার হাতে দাঁড়িয়ে, "দুশ্চরিত্র, লম্পট, জানোয়ার! ইচ্ছে করছে তোকে কুকুরের মত shoot করি এখন। তুই এমন চালটাই চালবি আগে বুঝেছিলাম। তাই তুই যখন সিগারেট দিয়েছিলি তখন আমি ওই বিষ মাখানো সিগারেটটা পকেটে রেখে দিয়ে ভাল সিগারেট বের করে ধরিয়েছিলাম। ভুলে যাস না, আমার পকেটেও সব সময় সিগারেট থাকে। আর মাটিতে পড়ে গিয়ে মরার ভান করাটা আশা করি তোর অভিনয়ের থেকেও নিখুঁত।"

"কিন্তু কোর্ট কি বিশ্বাস করবে মিস্টার সান্যাল? Where is the proof?"

ইন্দ্রদার একটা মোক্ষম ঘুষি পড়ল ওর নাকে, "সব প্রমাণ আছে এই টেপ রেকর্ডারে। এটা আমার পকেটেই ছিল। ইন্দ্রজিৎ সান্যাল তোর মত কাঁচা কাজ করে না মিস্টার রাজ্জাক! কি, আসল নামটা ঠিক বললাম তো?"

একদল পুলিশ ধরে নিয়ে গেল ওকে। ততক্ষণ নয়ন আমার বাঁধন খুলে দিয়েছে।

"এখনও একটা কাজ বাকি স্যার," ইন্দ্রদা হেড ইন্সপেক্টরের উদ্দেশ্যে বলল।

ইন্দ্রদা মোবাইলটা বের করে চট করে সায়ন রায়ের নম্বর ডায়াল করল। ডাকবাংলোর তালা বন্ধ করা ঘরটা থেকে রিং শোনা যাচ্ছে। দরজাটা ভেঙ্গে ফেলা হল। পাওয়া গেল একটা মৃতদেহ যার একটা হাত কাটা, অর্ধেকটা পচে গেছে। মৃতের পকেট থেকে মোবাইলের শব্দটা আসছিল। আর পাওয়া গেল মাদক দ্রব্য ভর্তি বাক্স।

ইন্দ্রদা বলল, "দেখুন তো স্যার, এই ডেড-বডিটা আসল ইন্সপেক্টরের অর্থাৎ সায়ন রায়ের কিনা?"

"হ্যাঁ! এই তো আমাদের ইন্সপেক্টর সায়ন রায়!"

"পচা গন্ধের উৎসটা বুঝতে পারছেন তো? এবার আমার কাজ শেষ।"

সেই রাতেই আমি আর ইন্দ্রদা নয়নকে ওর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলাম।আসার সময় নয়নের মা কৃতজ্ঞতার দুটো হাত বাড়িয়ে ইন্দ্রদাকে বললেন, "বাবা, তোমার নামটা তো বললে না?"
সেই রাতে
"বলছি-বলছি, সব বলছি। এত তাড়াহুড়ো করিস কেন?" ইন্দ্রদা বলল।

এর চারদিন পরের ঘটনা। ইন্দ্রদা তার চির পরিচিত ইজি চেয়ারে বসে কাঁচের টেবিলে হাতদুটো রেখে গোল্ড ফ্লেকের পরপর চারটে রিং ছেড়ে বাকিটা ইন করে জানালার ধারে বসে থাকা প্রজাপতিটাকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিল। রাত ন'টা। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি।

ইন্দ্রদা শুরু করল, "সেদিন রাতটা ছিল ঠিক আজকের মত। থোকা-থোকা কালো মেঘ ভেসে বেড়াতে-বেড়াতে কখন যে মুষলধারে বৃষ্টি নামিয়েছে.."

আমি বললাম, "তার মানে তুমি আমাদের সন্ধিগড় যাবার আগের রাতটার কথা বলছ?"

"Exactly তাই। দুর্যোগই ডেকে আনে ভয়ংকর পরিণতি। সেই রাতেই সন্ধিগড় থানায় transfer হয়ে যায় আসল সায়ন রায়। পথে পেরেক ফেলে আমাদেরই মত ওনার জিপ থামানো হয়েছিল এবং নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই মৃত্যুপুরীতে। অপরাধী ছিল চার-মূর্তি; নকল সায়ন রায়, যে আমার চোখে ধুলো দিয়ে আসছিল, যার আসল নাম রাজ্জাক। আর ছিল দীপেন, ভোলাবাবা, নয়ন।"

"নয়ন?"

"এক অভাবনীয় পরিস্থিতিতে পরেই এমন দিকে পা বাড়ায় নয়ন। সেই রাতে রাজ্জাক, যে দলের মূল পাণ্ডা হিসেবে ধরা পড়েছে, সে সায়ন রায়কে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করে নিজে সেজে যায় সায়ন রায়। রাজ্জাককে সন্ধিগড় থানার সবাই নতুন ইন্সপেক্টর বলে ভেবে নেয়। আমিও প্রথমে বুঝতে পারিনি। সন্দেহ আমার সেইদিনই হয় যেদিন ভজহরিবাবুর ঘরে তুই কালো রোমশ হাত দেখেছিলি আর ইন্সপেক্টর ওরফে রাজ্জাকের সঙ্গে আমি যখন করমর্দন করি। আমার মনে হয়েছিল, ওইটুকু সময়ের মধ্যে কেউ হাতে কালো গ্লাভস পড়ে ঘরের বাইরে এসে থাকলেও সে পালাল কিভাবে? আমার আন্দাজ যদি নির্ভুল হয় তাহলে বলতে পারি ইন্সপেক্টর রায় অর্থাৎ রাজ্জাকই সেদিন হাতে গ্লাভস পড়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল আর পরে গ্লাভসটা হাত থেকে খুলে নিয়ে চটজলদি পকেটে ঢুকিয়ে পিস্তল বের করে অভিনয় করেছিল। আমি করমর্দন করার সময় ওনার হাতে আংটিগুলো লক্ষ্য করছিলাম না, দেখতে পেয়েছিলাম আংটির ফাঁকে টুকরো কালো লোম। তখনও সন্দেহটা প্রকট হয় নি।"

"আমারা যেদিন বাংলো দেখে ফিরছিলাম আমাদের গাড়ির কাঁচে দীপেনবাবু সাবধান লিখে দিয়েছিল। তখন সায়ন রায় মানে রাজ্জাক যে গুলিটা ছুঁড়েছিল সেটা আমাদের দেখানোর জন্য!"

"একদম তাই! এত কম distance থেকে একজন পুলিশের টিপ miss হবার কথা নয়।"

"আর বাংলোতে যে মালাটা পাওয়া যায় সেটা ভজহরিবাবুকে ফাঁসানোর জন্য নিশ্চয়? আর টুপিতে কাঁচা-পাকা চুল অবশ্যই রাজ্জাকের, তাই না?
"হ্যাঁ। আর একটা প্রশ্ন তোর মনে জাগা উচিত ছিল, তালা দেওয়া ঘরটাতে search করে কিছু পাওয়া গেল না কেন? আসলে তালা দেওয়া ঘরটা search করাই হয় নি। আমি রাজ্জাককে আগেই ধরতে পারতাম। কিন্তু প্রথমত ছিল প্রমাণের অভাব, দ্বিতীয়ত পুরো দলটাকে ধরা উদ্দেশ্য ছিল আমার। আরো অনেক জায়গায় ওদের ঘাঁটি আছে যেখান থেকে ওরা মাদকদ্রব্য পাচার করে বিদেশে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি নয়ন বাড়ি থেকে পালিয়ে পথে-পথে ঘুরছিল। ওই দীপেন গাঙ্গুলি ওকে ওদের দলে টাকার লোভ দেখিয়ে টেনে আনে। দিনে ভোলাবাবা আর নয়ন গ্রামে বাপ-মেয়ে হিসেবে থাকত। রাতে বাংলোটায় ওদের ডেরা ছিল। কোনো মানুষ গেলে মুখোশ পড়ে, কালো লোমশ গ্লাভস পড়ে ভয় দেখানো হত। আর নয়ন হাসতে পারতো তীক্ষ্ণ অট্টহাসি।"

"কি ভয়ংকর দুঃসাহস?"

"সাহসের একি দেখলি? সবার পেছনে ছিল
রাজ্জাকের মাথা। অসম্ভব কূট বুদ্ধি লোকটার। সিগারেটে হাইড্রোসায়ানিক বিষ মাখিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিল। রহস্যজনক প্রত্যেকটা মৃত্যু ঘটিয়েছে রাজ্জাক। ত্রিলোকবাবুকেও সেই-ই মেরেছিল।"

"তা কি করে হয়? সেই সময় তো রাজ্জাক, মানে সায়ন রায় আমাদের সঙ্গে গাড়িতে ছিল।"

"মনে করে দ্যাখ, কাশী ভুত দেখেছিল বলে ওর বক্তব্য। তার মানে, ভোলাবাবা বা দীপেন কেউ মুখোশ পড়ে ওখানে গিয়েছিল। আমরা ত্রিলোকবাবুর ঘরে সিগারেট খাচ্ছি। সিগারেট প্যাকেটটা টেবিলের ওপর। কাশীর কথা শুনে আমরা ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলাম, তখন যে ভয় দেখাতে এসেছিল সে গেল পালিয়ে। আমাদের attention ওই দিকে। মনে করে দ্যাখ, সবার প্রথমে ঘর থেকে বেরোলেন ত্রিলোকবাবু, তারপর আমি আর তুই। ঘরে ছিল নকল সায়ন রায় বা রাজ্জাক। In the mean time, পকেট থেকে হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিডের শিশি বের করে প্যাকেটে যে দুটো সিগারেট পড়েছিল তার ফিল্টারে লাগিয়ে বাইরে ছুটে চলে আসা কি এমন কঠিন কাজ?"

" কিন্তু এতসব বুঝলে কি করে?"

"শুধুমাত্র চাই দৃষ্টিশক্তি। আর একটু বড় হ, তুইও পারবি। আমি ত্রিলোকবাবুর লাশ দেখতে যখন ঘরে ঢুকি তখন দুটো জিনিস আমাকে খটকা দেয়। ডেড-বডির হাতের তালুর কাছে ছাই এর মত গুড়ো আর ত্রিলোকনাথের ছাইদানের সিগারেট। আমরা যখন সিগারেট খাচ্ছিলাম তখন ওটা খালি ছিল। আমার আর ত্রিলোকবাবুর আধ-খাওয়া দুটো সিগারেট এর ফিল্টার ওখানে পড়ে থাকার কথা। কিন্তু পরে গিয়ে দেখলাম ছাইদানে তিনটে ফিল্টার। মানেটা দাঁড়াল এই যে আমরা চলে আসার পর ত্রিলোকবাবু সিগারেট খেয়েছিলেন। আর তাই তীব্র বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। হাতের কাছেই সিগারেটটা পড়েছিল। এবার প্রশ্ন ওটা ছাইদানে গেল কখন? আমরা যখন দুর্ঘটনা শুনে ত্রিলোকবাবু ঘরে ঢুকি তখন অনেক আগে ঢুকেছিল রাজ্জাক। প্রমাণ নষ্ট করে দেবার জন্য হাতের কাছে পড়ে থাকা সিগারেটটা তুলে ছাইদানে ফেলে দেয় রাজ্জাক। কিন্তু কিছু গুঁড়ো ছাই ওখানেই পড়ে থেকে যায়।"

"এ তো খুনির অনুপস্থিতিতে খুন?"

"তা যা বলেছিস। আর একটা সন্দেহের কারণ তোকে বলি, প্রথম দিন রাজ্জাক একটা কথা বলেছিল 'অপরাধীরা তো জেনেই গেছে তাদের পেছনে পুলিশ লেগেছে’ ... something something... আচ্ছা ও জানলো কি করে বলতো রহস্যের মূলে একজন অপরাধী নয়, অপরাধীরা রয়েছে? শুনলি তো সবই। এবার বলতো রাজ্জাক আমাদের কেন জড়াল? ও কি জানতো না গোয়েন্দা লাগালে নিজের বিপদ আরও বেশি?"

"এটা তো খুব সহজ ব্যাপার। ঘরে যে গুপ্তধন আছে তা ওরা জানতো, কিন্তু কোথায় আছে জানতো না। তাই তোমাকে কৌশলে ওখানে নিয়ে গিয়ে গুপ্তধনের সঙ্কেত শুনিয়ে গুপ্তধন হাতিয়ে নেবার তালে ছিল। নইলে ওরা তোমাকে আরও আগেই খুন করার চেষ্টা করতো।"

"Right সৌম্য! আচ্ছা, আর একটা প্রশ্ন? কাটা হাতটা অদৃশ্য হবার ব্যাপারে তোর কি মনে হয়?"

"সেই রাতে যে ভালুকটা আমাদের গাড়ির সামনে এসেছিল ও নিশ্চয় ভালুকের পোশাক পরা কেউ ছদ্মবেশী। সেই কাটা হাতটা এনেছিল। তারপর বনের রাস্তায় পালিয়ে গেলে আমরা ওর পেছনে ধাওয়া করি। তার মাঝখানে কেউ এসে হয়তো হাতটা সরিয়ে দিয়েছিল। এতজন মিলে আমাদের চোখে ধুলো দেওয়া খুব সহজ কাজ।"

বাইরে চোখ ধাঁধানো একটা বিদ্যুতের ঝলক দেখলাম। জানালাটা সজোরে বন্ধ করে দিলাম, রাতও বেশ হয়েছে।

ইন্দ্রদা বলল, "মোমবাতিটা নিভিয়ে দে।" (সমাপ্ত)

বিশেষ দ্রষ্টব্য:- তামাক সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

---- সংগৃহীত ----
Special - thanks to Santanu Das (writer)
Collected from - Social Media


1000336218.gif

জানাবেন কিন্তু গল্পটি কেমন লেগেছে, উৎসাহ পেলে আগে আরো গল্প নিয়ে আসবো আবার। ধন্যবাদ

@Anshhi @Bhoot @Babai_43 @Uronchondi @misstti @Maity Adi @InkyWhispers @ANNA007 @Ladywiththelamp @Ankita
 
Last edited:
@Sherl0ck
Wow! দারুণ একটা থ্রিলার শেষ হলো! প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাসপেন্স ধরে রেখেছে। বিশেষ করে শেষ পর্বের এই টানটান উত্তেজনা, যখন মনে হচ্ছিল ইন্দ্রদার সব শেষ, আর তারপর তার মাস্টারস্ট্রোক – অসাধারণ! প্রত্যেকটা ক্লু'র ব্যাখ্যা যেভাবে দিলেন, তা সত্যিই উপভোগ করার মতো। মনে হচ্ছে যেন একটা দারুণ বাংলা গোয়েন্দা সিনেমা দেখলাম।

গল্পটা অসাধারণ লেগেছে!তোমার লেখার গুণে প্রতিটি মোচড় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। নিশ্চিত থাকো ! তোমার কাছ থেকে আরও গল্প পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে থাকব। ধন্যবাদ!

Awesome Intelligence
 
@Sherl0ck
Wow! দারুণ একটা থ্রিলার শেষ হলো! প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সাসপেন্স ধরে রেখেছে। বিশেষ করে শেষ পর্বের এই টানটান উত্তেজনা, যখন মনে হচ্ছিল ইন্দ্রদার সব শেষ, আর তারপর তার মাস্টারস্ট্রোক – অসাধারণ! প্রত্যেকটা ক্লু'র ব্যাখ্যা যেভাবে দিলেন, তা সত্যিই উপভোগ করার মতো। মনে হচ্ছে যেন একটা দারুণ বাংলা গোয়েন্দা সিনেমা দেখলাম।

গল্পটা অসাধারণ লেগেছে!তোমার লেখার গুণে প্রতিটি মোচড় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। নিশ্চিত থাকো ! তোমার কাছ থেকে আরও গল্প পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে থাকব। ধন্যবাদ!

Awesome Intelligence
আবার অন্য চরিত্রে, অন্য কাহিনী নিয়ে আসছি , অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো ❤️
 
Let's make a conversation, please msg me, I can't you know
omg-oh-my-god.gifMy DM is a mystery that no one can enter or message. To get in here, you have to solve the mystery - because you are the world-famous detective "Sherlock Holmes". :giggle:
Awesome Intelligence
 
বেশ কথা বলতে পারো তো দেখছি ।
Awesome Intelligence
Zozo পাড়া তে আমার নাম ডাক আছে বলতে পারো, আড্ডা গান আর গপ্পের জন্য
 
Zozo পাড়া তে আমার নাম ডাক আছে বলতে পারো, আড্ডা গান আর গপ্পের জন্য
নাম থাকা ভালো । তাহলে তো অনেক পার্টনার তোমার - মিস্টার গোয়েন্দা ।
Awesome Intelligence
 
নাম থাকা ভালো । তাহলে তো অনেক পার্টনার তোমার - মিস্টার গোয়েন্দা ।
Awesome Intelligence
নাহ্ পার্টনার বানানোর মতো কাউকে পাইনি, তুমি ছাড়া গল্প কেউ পড়ে এখানে? দেখেছো আর কাউকে? আমি তো দেখিনি । তাই তোমারে বললাম (⁠ ⁠◜⁠‿⁠◝⁠ ⁠)⁠♡
 
নাহ্ পার্টনার বানানোর মতো কাউকে পাইনি, তুমি ছাড়া গল্প কেউ পড়ে এখানে? দেখেছো আর কাউকে? আমি তো দেখিনি । তাই তোমারে বললাম (⁠ ⁠◜⁠‿⁠◝⁠ ⁠)⁠♡
ওলে বাবা লে ! ছোট সোনা - দিনের শেষে কঠিন সময়টাতে পাশে দাঁড়ানোর কাউকে চাই সবারই । সেটা গল্পের জন্য হোক বা গল্প শোনানোর জন্য হোক।
Awesome Intelligence
 
ওলে বাবা লে ! ছোট সোনা - দিনের শেষে কঠিন সময়টাতে পাশে দাঁড়ানোর কাউকে চাই সবারই । সেটা গল্পের জন্য হোক বা গল্প শোনানোর জন্য হোক।
Awesome Intelligence
তুমি তো রহস্যে ফেলে রেখেছো আমি অনেক দিন থেকেই বলেছি তোমাকে, এই thread এর মধ্যেই যা কথা হয় আর কি :( :(
:sad1:
 
তুমি তো রহস্যে ফেলে রেখেছো আমি অনেক দিন থেকেই বলেছি তোমাকে, এই thread এর মধ্যেই যা কথা হয় আর কি :( :(
:sad1:
ভয় হয় খুব ।
Awesome Intelligence
 
পর্ব ১১

ঘরে ঢোকার সময় দেখলাম বাইরে আলতার মত লাল রঙের বারান্দায় বসে ভজহরিবাবু আনন্দবাজার পত্রিকা পড়ছেন। জানলা দিয়ে ভেসে আসছে মন্দিরের কাঁসর-ঘণ্টা ধ্বনি। হঠাৎ ভজহরিবাবু ছুটতে-ছুটতে আমাদের ঘরে ঢুকলেন, হাতে রবিবারের সংবাদপত্রটা।

"এই যে ডিটকেটিভ-বাবু, মানে ইয়ে, মানে ইন্দ্রবাবু; কাগজে দেখুন।"

সত্যিই কাগজের দু'নম্বর পাতায় অবাক করে দেবার মত একটা খবর, একটা ছোট্ট ছবি ছাপানো হয়েছে। খবর পড়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল।

"ছবিটি নয়ন সেন নামে এক একুশ বছরের কলেজ ছাত্রীর, ১৩ ই জুন থেকে নিরুদ্দেশ, হারিয়ে যাবার সময় পরনে ছিল আকাশী রঙের চুড়িদার, শাদা ওড়না। সন্ধান পেলে দয়া করে ০৩৩২২৮.... নম্বরে ফোন করবেন।"

ছবিটা যে নয়নের সেটা পরিষ্কার, কিন্তু সব ব্যাপারটা কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ইন্দ্রদা পকেট থেকে ফোন বের করে চট করে নম্বরটা ডায়াল করল, "হ্যালো!"

"হ্যাঁ বলুন।"

"আপনি নিশ্চয়ই নয়নের মা?"

"হ্যাঁ! কিন্তু আপনাকে..."

"আমি private detective from crime branch, নয়নের সন্ধান পাওয়া গেছে।"

"অ্যাঁ! আমার নয়ন কোথায় আছে? কবে? আমাকে কি করতে হবে?"

"আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন! তবে ব্যাপারটা যতটা সম্ভব গোপন রাখবেন।"

"আমার নয়ন ভাল আছে তো?"

"Don’t worry. By the by নয়ন নিরুদ্দেশ হল কিভাবে?"

"একমাস আগে একটা তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে বাবার সাথে ওর ঝগড়া হয়। আর নয়ন খুবই একরোখা। তাই সেদিন কাউকে না বলে ও কোথায় চলে যায় জানতেও পারিনি। পরে কোনও খবরও পাই নি।"

"আচ্ছা নয়নের বাবা?"

"উনি নয়ন চলে যাবার পরের দিনই হার্ট ফেল করে..."

"Sorry, I’m really very sorry. কোনো চিন্তা করবেন না। তবে আবার বলছি জানাজানি যেন না হয়।"

মোবাইলটা কেটে দিয়ে ইন্দ্রদা আর একটা নম্বরে ফোন করল।

"হ্যাঁ আমি ইন্দ্রজিৎ বলছি ... Horrible case, রাত নটা নাগাদ পুরো force নিয়ে আসতে হবে ... সেটা গোপনীয়। এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আচ্ছা সায়ন রায়ের মোবাইল নম্বরটা কত? ... তাহলে time maintain করে আসবেন।"

ভজহরিবাবু তখনও হাঁ করে দাঁড়িয়ে, "আপনাদের কি তাহলে সব রহস্য know হয়ে গেছে? মানে ..."

"মানে আর কিছুই নয়, সবই প্রায় হাতের মুঠোয় ভজহরিবাবু।"

"আমি এখন go." উনি যেন একটু তাড়াহুড়ো করেই বেরিয়ে গেলেন। ভজহরিবাবু চলে যাবার পর ইন্দ্রদা বাইরে বেরোল। বলল একটা tape recorder কিনতে যাচ্ছে। সন্ধ্যে ছ'টায় সায়ন রায় চলে আসার আগেই ইন্দ্রদা ফিরে এল।

◕ ◕

"ইন্দ্রজিৎ-বাবু, I have come in right time."

"হ্যাঁ, আসুন-আসুন।"

"আপনি genious, তবে জানতে ইচ্ছে করছে দীপেনবাবুই যে..."

"কৌতূহল দমন করুন। অপরাধী ধরা পড়লে সবই জানতে পারবেন।"
মুখোশ-ধারী
"দীপেন জানতে যেন না পারে আমরা ওর জন্য ওঁত পেতে বসে আছি।" সায়ন রায় জিপ থেকে নামতে-নামতে বললেন।

জ্যোৎস্নার ছিটেফোঁটা নেই আজ আকাশে। তার ওপর রহস্যময় ডাকবাংলোর ভেতর থেকে অস্বাভাবিক কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। গোটা বাড়িটা আজ অন্ধকার। ইন্দ্রদার টর্চ অনুসরণ করে চলেছি আমি আর সায়ন রায়। আলোহীন বাংলোয় প্রবেশ করতেই অস্বাভাবিক শব্দগুলো মিলিয়ে গেল। ওরা কি আজ তবে ভয় পেয়েছে?

আমি, সায়ন রায় আর ইন্দ্রদা ঘড়ির নিচে এলাম। ইন্দ্রদা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ওনাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল। তারপর ঘড়ির মিনিটের কাঁটা বারোর ঘরে আর ঘণ্টার কাঁটা সাতের ঘরে আনতেই দেওয়াল থেকে ঘড়িটা খুলে এল। তার বদলে দেওয়ালে একটা গর্ত। টর্চ মেরে দেখা গেল চকচকে কতগুলো হীরে। আবার ঘড়িটাকে দেওয়ালে আটকে দিয়ে ইন্দ্রদা বলে উঠল, "চলুন কোথাও আত্মগোপন করে থাকি।"

আমরা এককোণে ড্রেসিং টেবিলের পেছনে রইলাম। ইন্দ্রদা আর ইন্সপেক্টরের হাতে উদ্যত পিস্তল। সব নিস্তব্ধ। ন'টা বাজতে পাঁচ, কেউ আসছে না। ইন্দ্রদার চোখে মুখে উত্তেজনা আর সায়ন রায়ের ক্ষিপ্র দৃষ্টি। একটা তীব্র পচা গন্ধ নাকে আসছিল। হঠাৎ সায়ন রায় ইন্দ্রদাকে সিগারেট অফার করলেন।

"আপনি তো সিগারেট খান না?"

"মাঝে-সাঝে খাই বইকি। তবে পকেটে থাকে, এই যেমন এখন একটা ধরালে মন্দ হবে না।"

ইন্দ্রদাও নিজের brand, gold flake টা পেয়ে বেশ খুশিই হল। অন্ধকারেই বুঝতে পারলাম ও ডান পকেট থেকে লাইটারটা বের করল। গ্যাস-লাইটের আলোর ঝলকানিতে ইন্দ্রদা প্রথমবার ধোঁয়া ছাড়ল। সায়ন রায় অদ্ভুত দৃষ্টিতে ইন্দ্রদার দিকে তাকিয়ে। ইন্দ্রদা হঠাৎ যেন কেমন হয়ে গেল। এবার বুকে হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে ইন্দ্রদা হাঁফাতে শুরু করল, "আমার গলা বু... বুক... কে... কে... কেন এমন হ... হ...হয়ে... যাচ্ছে?"

ইন্দ্রদা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, হাতের সিগারেটটা তখনও ধরা। আমি ইন্দ্রদার বুকের কাছে বসে পড়েছি। পেছন দিক থেকে একটা হাত কালো ফিতে দিয়ে আমার মুখ বেঁধে আমাকে বোবা করে দিল। তারপর থামের কাছে বেঁধে দিতেই আমি পুরো অনড় হয়ে গেলাম।

না না... তা হয় না। চোখ দিয়ে তখন আমার দু'ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে। এবার চোখ গেল আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তচক্ষু সায়ন রায়ের দিকে; অট্টহাসি হাসছে। বিস্ময়ে আমার চোখের জল শুকিয়ে গেছে তখন।

"হ্যাঁ আমি সায়ন রায়, ইন্সপেক্টর সায়ন রায়, রহস্যের উৎস কর্তা, বুঝলি হে ছোকরা? আর তোর ইন্দ্রদা এখন তীব্র হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড সহ্য করতে না পেরে মারা গেছে।"
দুঃখে, জ্বালায়, ভয়ে আমার ঘাম আর চোখের জল এক হয়ে গেল। এই তাহলে ইন্সপেক্টরের আসল মূর্তি। এবার পাশের ঘর থেকে আবির্ভাব হল আরও দুজন। একজন দীপেন গাঙ্গুলি আর একজন বুড়ো ভোলাবাবা, তবে সে এখন বুড়ো নয় জলজ্যান্ত এক নরপিশাচ যুবক, আর সেই রাতের ছদ্মবেশী রামনাথ। সবার অট্টহাসিতে ডাকবাংলোটা গমগম করছে। এবার সব থেকে অবাক লাগল নয়নকে পাশের ঘর থেকে আসতে দেখে। ঘরের লাইট জ্বলে উঠল। আমি অস্ফুট-বদনে নিরুপায় শক্তিহীন হয়ে আবদ্ধ রয়েছি।

হঠাৎ সায়ন রায় গর্জে উঠল, "তোকেও মরতে হবে রে ছোকরা। আর তা না হলে আমাদের পুরো দলটাকে তুই -। চলো ফ্রেন্ডস, শেষ কাঁটাটাকে সরিয়ে দিয়ে আমরা আনন্দ করি।"

নয়ন বলে উঠল, "আপনি ওনাকে ওভাবে মারলেন কেন? ইন্দ্রবাবু তো কোনো দোষ করেন নি, আর মারলেনই বা কিভাবে? যাই-হোক আমি আমার প্রাপ্য টাকা নিয়ে চলে যেতে চাই, প্লিজ আমাকে যেতে দিন।"

দীপেন গাঙ্গুলি বলে উঠল, "খুব তো দরদ দেখছি ডিটেকটিভের জন্য। প্রেমে-টেমে পড়লে নাকি?"

"আমার আর এসমস্ত খুন-খারাপি ভাল লাগছে না। আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে আমাকে যেতে দিন।"

"চলে যাবে! হা…হা…হা, তা তো যাবেই। তবে আজকের রাতটা তো আমাদের সাথে আনন্দ করে যেতে হবে।"

নয়নের দু'চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। সায়ন রায়, দীপেন ও ভোলাবাবা ওরফে রামনাথকে সিগারেট আর বিয়ার দিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে ওরা দুজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আমি অনড়, বোবা হয়ে প্রতীক্ষা করছি নিজের মৃত্যুর।

নয়ন এবার কেঁদে ফেলেছে, "একি! আপনি কি করছেন? এক-এক করে সবাইকে মেরে ..."

"হ্যাঁ নয়ন, ঠিক তাই। সিগারেটের পেছনে তীব্র হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড লাগিয়ে আমি এদের মেরেছি। লভ্যাংশের টাকা, হেরোইনের সমস্ত লাভ এখন আমার। তুমিও বাদ যাবে না নয়ন। এর জন্য আমার পিস্তলের একটা গুলিই যথেষ্ট।"

আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি বাঁধন খোলার। এবার একটা গুলির আওয়াজ; সায়ন রায়ের পিস্তল গেছে ছিটকে। বাইরে পুলিশ ভ্যানের সিগন্যাল। ইন্দ্রদার হাতের রিভলভারের একটা গুলি সায়ন রায়ের পিস্তল ছিটকে দিয়েছে। সায়ন রায় হতভম্ব। ইন্দ্রদা মাটি থেকে উঠে উদ্বত রিভলভার হাতে দাঁড়িয়ে, "দুশ্চরিত্র, লম্পট, জানোয়ার! ইচ্ছে করছে তোকে কুকুরের মত shoot করি এখন। তুই এমন চালটাই চালবি আগে বুঝেছিলাম। তাই তুই যখন সিগারেট দিয়েছিলি তখন আমি ওই বিষ মাখানো সিগারেটটা পকেটে রেখে দিয়ে ভাল সিগারেট বের করে ধরিয়েছিলাম। ভুলে যাস না, আমার পকেটেও সব সময় সিগারেট থাকে। আর মাটিতে পড়ে গিয়ে মরার ভান করাটা আশা করি তোর অভিনয়ের থেকেও নিখুঁত।"

"কিন্তু কোর্ট কি বিশ্বাস করবে মিস্টার সান্যাল? Where is the proof?"

ইন্দ্রদার একটা মোক্ষম ঘুষি পড়ল ওর নাকে, "সব প্রমাণ আছে এই টেপ রেকর্ডারে। এটা আমার পকেটেই ছিল। ইন্দ্রজিৎ সান্যাল তোর মত কাঁচা কাজ করে না মিস্টার রাজ্জাক! কি, আসল নামটা ঠিক বললাম তো?"

একদল পুলিশ ধরে নিয়ে গেল ওকে। ততক্ষণ নয়ন আমার বাঁধন খুলে দিয়েছে।

"এখনও একটা কাজ বাকি স্যার," ইন্দ্রদা হেড ইন্সপেক্টরের উদ্দেশ্যে বলল।

ইন্দ্রদা মোবাইলটা বের করে চট করে সায়ন রায়ের নম্বর ডায়াল করল। ডাকবাংলোর তালা বন্ধ করা ঘরটা থেকে রিং শোনা যাচ্ছে। দরজাটা ভেঙ্গে ফেলা হল। পাওয়া গেল একটা মৃতদেহ যার একটা হাত কাটা, অর্ধেকটা পচে গেছে। মৃতের পকেট থেকে মোবাইলের শব্দটা আসছিল। আর পাওয়া গেল মাদক দ্রব্য ভর্তি বাক্স।

ইন্দ্রদা বলল, "দেখুন তো স্যার, এই ডেড-বডিটা আসল ইন্সপেক্টরের অর্থাৎ সায়ন রায়ের কিনা?"

"হ্যাঁ! এই তো আমাদের ইন্সপেক্টর সায়ন রায়!"

"পচা গন্ধের উৎসটা বুঝতে পারছেন তো? এবার আমার কাজ শেষ।"

সেই রাতেই আমি আর ইন্দ্রদা নয়নকে ওর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলাম।আসার সময় নয়নের মা কৃতজ্ঞতার দুটো হাত বাড়িয়ে ইন্দ্রদাকে বললেন, "বাবা, তোমার নামটা তো বললে না?"
সেই রাতে
"বলছি-বলছি, সব বলছি। এত তাড়াহুড়ো করিস কেন?" ইন্দ্রদা বলল।

এর চারদিন পরের ঘটনা। ইন্দ্রদা তার চির পরিচিত ইজি চেয়ারে বসে কাঁচের টেবিলে হাতদুটো রেখে গোল্ড ফ্লেকের পরপর চারটে রিং ছেড়ে বাকিটা ইন করে জানালার ধারে বসে থাকা প্রজাপতিটাকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিল। রাত ন'টা। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি।

ইন্দ্রদা শুরু করল, "সেদিন রাতটা ছিল ঠিক আজকের মত। থোকা-থোকা কালো মেঘ ভেসে বেড়াতে-বেড়াতে কখন যে মুষলধারে বৃষ্টি নামিয়েছে.."

আমি বললাম, "তার মানে তুমি আমাদের সন্ধিগড় যাবার আগের রাতটার কথা বলছ?"

"Exactly তাই। দুর্যোগই ডেকে আনে ভয়ংকর পরিণতি। সেই রাতেই সন্ধিগড় থানায় transfer হয়ে যায় আসল সায়ন রায়। পথে পেরেক ফেলে আমাদেরই মত ওনার জিপ থামানো হয়েছিল এবং নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই মৃত্যুপুরীতে। অপরাধী ছিল চার-মূর্তি; নকল সায়ন রায়, যে আমার চোখে ধুলো দিয়ে আসছিল, যার আসল নাম রাজ্জাক। আর ছিল দীপেন, ভোলাবাবা, নয়ন।"

"নয়ন?"

"এক অভাবনীয় পরিস্থিতিতে পরেই এমন দিকে পা বাড়ায় নয়ন। সেই রাতে রাজ্জাক, যে দলের মূল পাণ্ডা হিসেবে ধরা পড়েছে, সে সায়ন রায়কে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করে নিজে সেজে যায় সায়ন রায়। রাজ্জাককে সন্ধিগড় থানার সবাই নতুন ইন্সপেক্টর বলে ভেবে নেয়। আমিও প্রথমে বুঝতে পারিনি। সন্দেহ আমার সেইদিনই হয় যেদিন ভজহরিবাবুর ঘরে তুই কালো রোমশ হাত দেখেছিলি আর ইন্সপেক্টর ওরফে রাজ্জাকের সঙ্গে আমি যখন করমর্দন করি। আমার মনে হয়েছিল, ওইটুকু সময়ের মধ্যে কেউ হাতে কালো গ্লাভস পড়ে ঘরের বাইরে এসে থাকলেও সে পালাল কিভাবে? আমার আন্দাজ যদি নির্ভুল হয় তাহলে বলতে পারি ইন্সপেক্টর রায় অর্থাৎ রাজ্জাকই সেদিন হাতে গ্লাভস পড়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল আর পরে গ্লাভসটা হাত থেকে খুলে নিয়ে চটজলদি পকেটে ঢুকিয়ে পিস্তল বের করে অভিনয় করেছিল। আমি করমর্দন করার সময় ওনার হাতে আংটিগুলো লক্ষ্য করছিলাম না, দেখতে পেয়েছিলাম আংটির ফাঁকে টুকরো কালো লোম। তখনও সন্দেহটা প্রকট হয় নি।"

"আমারা যেদিন বাংলো দেখে ফিরছিলাম আমাদের গাড়ির কাঁচে দীপেনবাবু সাবধান লিখে দিয়েছিল। তখন সায়ন রায় মানে রাজ্জাক যে গুলিটা ছুঁড়েছিল সেটা আমাদের দেখানোর জন্য!"

"একদম তাই! এত কম distance থেকে একজন পুলিশের টিপ miss হবার কথা নয়।"

"আর বাংলোতে যে মালাটা পাওয়া যায় সেটা ভজহরিবাবুকে ফাঁসানোর জন্য নিশ্চয়? আর টুপিতে কাঁচা-পাকা চুল অবশ্যই রাজ্জাকের, তাই না?
"হ্যাঁ। আর একটা প্রশ্ন তোর মনে জাগা উচিত ছিল, তালা দেওয়া ঘরটাতে search করে কিছু পাওয়া গেল না কেন? আসলে তালা দেওয়া ঘরটা search করাই হয় নি। আমি রাজ্জাককে আগেই ধরতে পারতাম। কিন্তু প্রথমত ছিল প্রমাণের অভাব, দ্বিতীয়ত পুরো দলটাকে ধরা উদ্দেশ্য ছিল আমার। আরো অনেক জায়গায় ওদের ঘাঁটি আছে যেখান থেকে ওরা মাদকদ্রব্য পাচার করে বিদেশে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি নয়ন বাড়ি থেকে পালিয়ে পথে-পথে ঘুরছিল। ওই দীপেন গাঙ্গুলি ওকে ওদের দলে টাকার লোভ দেখিয়ে টেনে আনে। দিনে ভোলাবাবা আর নয়ন গ্রামে বাপ-মেয়ে হিসেবে থাকত। রাতে বাংলোটায় ওদের ডেরা ছিল। কোনো মানুষ গেলে মুখোশ পড়ে, কালো লোমশ গ্লাভস পড়ে ভয় দেখানো হত। আর নয়ন হাসতে পারতো তীক্ষ্ণ অট্টহাসি।"

"কি ভয়ংকর দুঃসাহস?"

"সাহসের একি দেখলি? সবার পেছনে ছিল
রাজ্জাকের মাথা। অসম্ভব কূট বুদ্ধি লোকটার। সিগারেটে হাইড্রোসায়ানিক বিষ মাখিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিল। রহস্যজনক প্রত্যেকটা মৃত্যু ঘটিয়েছে রাজ্জাক। ত্রিলোকবাবুকেও সেই-ই মেরেছিল।"

"তা কি করে হয়? সেই সময় তো রাজ্জাক, মানে সায়ন রায় আমাদের সঙ্গে গাড়িতে ছিল।"

"মনে করে দ্যাখ, কাশী ভুত দেখেছিল বলে ওর বক্তব্য। তার মানে, ভোলাবাবা বা দীপেন কেউ মুখোশ পড়ে ওখানে গিয়েছিল। আমরা ত্রিলোকবাবুর ঘরে সিগারেট খাচ্ছি। সিগারেট প্যাকেটটা টেবিলের ওপর। কাশীর কথা শুনে আমরা ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলাম, তখন যে ভয় দেখাতে এসেছিল সে গেল পালিয়ে। আমাদের attention ওই দিকে। মনে করে দ্যাখ, সবার প্রথমে ঘর থেকে বেরোলেন ত্রিলোকবাবু, তারপর আমি আর তুই। ঘরে ছিল নকল সায়ন রায় বা রাজ্জাক। In the mean time, পকেট থেকে হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিডের শিশি বের করে প্যাকেটে যে দুটো সিগারেট পড়েছিল তার ফিল্টারে লাগিয়ে বাইরে ছুটে চলে আসা কি এমন কঠিন কাজ?"

" কিন্তু এতসব বুঝলে কি করে?"

"শুধুমাত্র চাই দৃষ্টিশক্তি। আর একটু বড় হ, তুইও পারবি। আমি ত্রিলোকবাবুর লাশ দেখতে যখন ঘরে ঢুকি তখন দুটো জিনিস আমাকে খটকা দেয়। ডেড-বডির হাতের তালুর কাছে ছাই এর মত গুড়ো আর ত্রিলোকনাথের ছাইদানের সিগারেট। আমরা যখন সিগারেট খাচ্ছিলাম তখন ওটা খালি ছিল। আমার আর ত্রিলোকবাবুর আধ-খাওয়া দুটো সিগারেট এর ফিল্টার ওখানে পড়ে থাকার কথা। কিন্তু পরে গিয়ে দেখলাম ছাইদানে তিনটে ফিল্টার। মানেটা দাঁড়াল এই যে আমরা চলে আসার পর ত্রিলোকবাবু সিগারেট খেয়েছিলেন। আর তাই তীব্র বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। হাতের কাছেই সিগারেটটা পড়েছিল। এবার প্রশ্ন ওটা ছাইদানে গেল কখন? আমরা যখন দুর্ঘটনা শুনে ত্রিলোকবাবু ঘরে ঢুকি তখন অনেক আগে ঢুকেছিল রাজ্জাক। প্রমাণ নষ্ট করে দেবার জন্য হাতের কাছে পড়ে থাকা সিগারেটটা তুলে ছাইদানে ফেলে দেয় রাজ্জাক। কিন্তু কিছু গুঁড়ো ছাই ওখানেই পড়ে থেকে যায়।"

"এ তো খুনির অনুপস্থিতিতে খুন?"

"তা যা বলেছিস। আর একটা সন্দেহের কারণ তোকে বলি, প্রথম দিন রাজ্জাক একটা কথা বলেছিল 'অপরাধীরা তো জেনেই গেছে তাদের পেছনে পুলিশ লেগেছে’ ... something something... আচ্ছা ও জানলো কি করে বলতো রহস্যের মূলে একজন অপরাধী নয়, অপরাধীরা রয়েছে? শুনলি তো সবই। এবার বলতো রাজ্জাক আমাদের কেন জড়াল? ও কি জানতো না গোয়েন্দা লাগালে নিজের বিপদ আরও বেশি?"

"এটা তো খুব সহজ ব্যাপার। ঘরে যে গুপ্তধন আছে তা ওরা জানতো, কিন্তু কোথায় আছে জানতো না। তাই তোমাকে কৌশলে ওখানে নিয়ে গিয়ে গুপ্তধনের সঙ্কেত শুনিয়ে গুপ্তধন হাতিয়ে নেবার তালে ছিল। নইলে ওরা তোমাকে আরও আগেই খুন করার চেষ্টা করতো।"

"Right সৌম্য! আচ্ছা, আর একটা প্রশ্ন? কাটা হাতটা অদৃশ্য হবার ব্যাপারে তোর কি মনে হয়?"

"সেই রাতে যে ভালুকটা আমাদের গাড়ির সামনে এসেছিল ও নিশ্চয় ভালুকের পোশাক পরা কেউ ছদ্মবেশী। সেই কাটা হাতটা এনেছিল। তারপর বনের রাস্তায় পালিয়ে গেলে আমরা ওর পেছনে ধাওয়া করি। তার মাঝখানে কেউ এসে হয়তো হাতটা সরিয়ে দিয়েছিল। এতজন মিলে আমাদের চোখে ধুলো দেওয়া খুব সহজ কাজ।"

বাইরে চোখ ধাঁধানো একটা বিদ্যুতের ঝলক দেখলাম। জানালাটা সজোরে বন্ধ করে দিলাম, রাতও বেশ হয়েছে।

ইন্দ্রদা বলল, "মোমবাতিটা নিভিয়ে দে।" (সমাপ্ত)

বিশেষ দ্রষ্টব্য:- তামাক সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

---- সংগৃহীত ----

View attachment 347443

জানাবেন কিন্তু গল্পটি কেমন লেগেছে, উৎসাহ পেলে আগে আরো গল্প নিয়ে আসবো আবার। ধন্যবাদ

@Anshhi @Bhoot @Babai_43 @Uronchondi @misstti @Maity Adi @InkyWhispers @ANNA007 @Ladywiththelamp @Ankita
Nice bhai
 
পর্ব ১১

ঘরে ঢোকার সময় দেখলাম বাইরে আলতার মত লাল রঙের বারান্দায় বসে ভজহরিবাবু আনন্দবাজার পত্রিকা পড়ছেন। জানলা দিয়ে ভেসে আসছে মন্দিরের কাঁসর-ঘণ্টা ধ্বনি। হঠাৎ ভজহরিবাবু ছুটতে-ছুটতে আমাদের ঘরে ঢুকলেন, হাতে রবিবারের সংবাদপত্রটা।

"এই যে ডিটকেটিভ-বাবু, মানে ইয়ে, মানে ইন্দ্রবাবু; কাগজে দেখুন।"

সত্যিই কাগজের দু'নম্বর পাতায় অবাক করে দেবার মত একটা খবর, একটা ছোট্ট ছবি ছাপানো হয়েছে। খবর পড়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল।

"ছবিটি নয়ন সেন নামে এক একুশ বছরের কলেজ ছাত্রীর, ১৩ ই জুন থেকে নিরুদ্দেশ, হারিয়ে যাবার সময় পরনে ছিল আকাশী রঙের চুড়িদার, শাদা ওড়না। সন্ধান পেলে দয়া করে ০৩৩২২৮.... নম্বরে ফোন করবেন।"

ছবিটা যে নয়নের সেটা পরিষ্কার, কিন্তু সব ব্যাপারটা কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ইন্দ্রদা পকেট থেকে ফোন বের করে চট করে নম্বরটা ডায়াল করল, "হ্যালো!"

"হ্যাঁ বলুন।"

"আপনি নিশ্চয়ই নয়নের মা?"

"হ্যাঁ! কিন্তু আপনাকে..."

"আমি private detective from crime branch, নয়নের সন্ধান পাওয়া গেছে।"

"অ্যাঁ! আমার নয়ন কোথায় আছে? কবে? আমাকে কি করতে হবে?"

"আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন! তবে ব্যাপারটা যতটা সম্ভব গোপন রাখবেন।"

"আমার নয়ন ভাল আছে তো?"

"Don’t worry. By the by নয়ন নিরুদ্দেশ হল কিভাবে?"

"একমাস আগে একটা তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে বাবার সাথে ওর ঝগড়া হয়। আর নয়ন খুবই একরোখা। তাই সেদিন কাউকে না বলে ও কোথায় চলে যায় জানতেও পারিনি। পরে কোনও খবরও পাই নি।"

"আচ্ছা নয়নের বাবা?"

"উনি নয়ন চলে যাবার পরের দিনই হার্ট ফেল করে..."

"Sorry, I’m really very sorry. কোনো চিন্তা করবেন না। তবে আবার বলছি জানাজানি যেন না হয়।"

মোবাইলটা কেটে দিয়ে ইন্দ্রদা আর একটা নম্বরে ফোন করল।

"হ্যাঁ আমি ইন্দ্রজিৎ বলছি ... Horrible case, রাত নটা নাগাদ পুরো force নিয়ে আসতে হবে ... সেটা গোপনীয়। এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আচ্ছা সায়ন রায়ের মোবাইল নম্বরটা কত? ... তাহলে time maintain করে আসবেন।"

ভজহরিবাবু তখনও হাঁ করে দাঁড়িয়ে, "আপনাদের কি তাহলে সব রহস্য know হয়ে গেছে? মানে ..."

"মানে আর কিছুই নয়, সবই প্রায় হাতের মুঠোয় ভজহরিবাবু।"

"আমি এখন go." উনি যেন একটু তাড়াহুড়ো করেই বেরিয়ে গেলেন। ভজহরিবাবু চলে যাবার পর ইন্দ্রদা বাইরে বেরোল। বলল একটা tape recorder কিনতে যাচ্ছে। সন্ধ্যে ছ'টায় সায়ন রায় চলে আসার আগেই ইন্দ্রদা ফিরে এল।

◕ ◕

"ইন্দ্রজিৎ-বাবু, I have come in right time."

"হ্যাঁ, আসুন-আসুন।"

"আপনি genious, তবে জানতে ইচ্ছে করছে দীপেনবাবুই যে..."

"কৌতূহল দমন করুন। অপরাধী ধরা পড়লে সবই জানতে পারবেন।"
মুখোশ-ধারী
"দীপেন জানতে যেন না পারে আমরা ওর জন্য ওঁত পেতে বসে আছি।" সায়ন রায় জিপ থেকে নামতে-নামতে বললেন।

জ্যোৎস্নার ছিটেফোঁটা নেই আজ আকাশে। তার ওপর রহস্যময় ডাকবাংলোর ভেতর থেকে অস্বাভাবিক কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। গোটা বাড়িটা আজ অন্ধকার। ইন্দ্রদার টর্চ অনুসরণ করে চলেছি আমি আর সায়ন রায়। আলোহীন বাংলোয় প্রবেশ করতেই অস্বাভাবিক শব্দগুলো মিলিয়ে গেল। ওরা কি আজ তবে ভয় পেয়েছে?

আমি, সায়ন রায় আর ইন্দ্রদা ঘড়ির নিচে এলাম। ইন্দ্রদা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ওনাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল। তারপর ঘড়ির মিনিটের কাঁটা বারোর ঘরে আর ঘণ্টার কাঁটা সাতের ঘরে আনতেই দেওয়াল থেকে ঘড়িটা খুলে এল। তার বদলে দেওয়ালে একটা গর্ত। টর্চ মেরে দেখা গেল চকচকে কতগুলো হীরে। আবার ঘড়িটাকে দেওয়ালে আটকে দিয়ে ইন্দ্রদা বলে উঠল, "চলুন কোথাও আত্মগোপন করে থাকি।"

আমরা এককোণে ড্রেসিং টেবিলের পেছনে রইলাম। ইন্দ্রদা আর ইন্সপেক্টরের হাতে উদ্যত পিস্তল। সব নিস্তব্ধ। ন'টা বাজতে পাঁচ, কেউ আসছে না। ইন্দ্রদার চোখে মুখে উত্তেজনা আর সায়ন রায়ের ক্ষিপ্র দৃষ্টি। একটা তীব্র পচা গন্ধ নাকে আসছিল। হঠাৎ সায়ন রায় ইন্দ্রদাকে সিগারেট অফার করলেন।

"আপনি তো সিগারেট খান না?"

"মাঝে-সাঝে খাই বইকি। তবে পকেটে থাকে, এই যেমন এখন একটা ধরালে মন্দ হবে না।"

ইন্দ্রদাও নিজের brand, gold flake টা পেয়ে বেশ খুশিই হল। অন্ধকারেই বুঝতে পারলাম ও ডান পকেট থেকে লাইটারটা বের করল। গ্যাস-লাইটের আলোর ঝলকানিতে ইন্দ্রদা প্রথমবার ধোঁয়া ছাড়ল। সায়ন রায় অদ্ভুত দৃষ্টিতে ইন্দ্রদার দিকে তাকিয়ে। ইন্দ্রদা হঠাৎ যেন কেমন হয়ে গেল। এবার বুকে হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে ইন্দ্রদা হাঁফাতে শুরু করল, "আমার গলা বু... বুক... কে... কে... কেন এমন হ... হ...হয়ে... যাচ্ছে?"

ইন্দ্রদা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, হাতের সিগারেটটা তখনও ধরা। আমি ইন্দ্রদার বুকের কাছে বসে পড়েছি। পেছন দিক থেকে একটা হাত কালো ফিতে দিয়ে আমার মুখ বেঁধে আমাকে বোবা করে দিল। তারপর থামের কাছে বেঁধে দিতেই আমি পুরো অনড় হয়ে গেলাম।

না না... তা হয় না। চোখ দিয়ে তখন আমার দু'ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে। এবার চোখ গেল আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তচক্ষু সায়ন রায়ের দিকে; অট্টহাসি হাসছে। বিস্ময়ে আমার চোখের জল শুকিয়ে গেছে তখন।

"হ্যাঁ আমি সায়ন রায়, ইন্সপেক্টর সায়ন রায়, রহস্যের উৎস কর্তা, বুঝলি হে ছোকরা? আর তোর ইন্দ্রদা এখন তীব্র হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড সহ্য করতে না পেরে মারা গেছে।"
দুঃখে, জ্বালায়, ভয়ে আমার ঘাম আর চোখের জল এক হয়ে গেল। এই তাহলে ইন্সপেক্টরের আসল মূর্তি। এবার পাশের ঘর থেকে আবির্ভাব হল আরও দুজন। একজন দীপেন গাঙ্গুলি আর একজন বুড়ো ভোলাবাবা, তবে সে এখন বুড়ো নয় জলজ্যান্ত এক নরপিশাচ যুবক, আর সেই রাতের ছদ্মবেশী রামনাথ। সবার অট্টহাসিতে ডাকবাংলোটা গমগম করছে। এবার সব থেকে অবাক লাগল নয়নকে পাশের ঘর থেকে আসতে দেখে। ঘরের লাইট জ্বলে উঠল। আমি অস্ফুট-বদনে নিরুপায় শক্তিহীন হয়ে আবদ্ধ রয়েছি।

হঠাৎ সায়ন রায় গর্জে উঠল, "তোকেও মরতে হবে রে ছোকরা। আর তা না হলে আমাদের পুরো দলটাকে তুই -। চলো ফ্রেন্ডস, শেষ কাঁটাটাকে সরিয়ে দিয়ে আমরা আনন্দ করি।"

নয়ন বলে উঠল, "আপনি ওনাকে ওভাবে মারলেন কেন? ইন্দ্রবাবু তো কোনো দোষ করেন নি, আর মারলেনই বা কিভাবে? যাই-হোক আমি আমার প্রাপ্য টাকা নিয়ে চলে যেতে চাই, প্লিজ আমাকে যেতে দিন।"

দীপেন গাঙ্গুলি বলে উঠল, "খুব তো দরদ দেখছি ডিটেকটিভের জন্য। প্রেমে-টেমে পড়লে নাকি?"

"আমার আর এসমস্ত খুন-খারাপি ভাল লাগছে না। আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে আমাকে যেতে দিন।"

"চলে যাবে! হা…হা…হা, তা তো যাবেই। তবে আজকের রাতটা তো আমাদের সাথে আনন্দ করে যেতে হবে।"

নয়নের দু'চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। সায়ন রায়, দীপেন ও ভোলাবাবা ওরফে রামনাথকে সিগারেট আর বিয়ার দিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে ওরা দুজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আমি অনড়, বোবা হয়ে প্রতীক্ষা করছি নিজের মৃত্যুর।

নয়ন এবার কেঁদে ফেলেছে, "একি! আপনি কি করছেন? এক-এক করে সবাইকে মেরে ..."

"হ্যাঁ নয়ন, ঠিক তাই। সিগারেটের পেছনে তীব্র হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড লাগিয়ে আমি এদের মেরেছি। লভ্যাংশের টাকা, হেরোইনের সমস্ত লাভ এখন আমার। তুমিও বাদ যাবে না নয়ন। এর জন্য আমার পিস্তলের একটা গুলিই যথেষ্ট।"

আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি বাঁধন খোলার। এবার একটা গুলির আওয়াজ; সায়ন রায়ের পিস্তল গেছে ছিটকে। বাইরে পুলিশ ভ্যানের সিগন্যাল। ইন্দ্রদার হাতের রিভলভারের একটা গুলি সায়ন রায়ের পিস্তল ছিটকে দিয়েছে। সায়ন রায় হতভম্ব। ইন্দ্রদা মাটি থেকে উঠে উদ্বত রিভলভার হাতে দাঁড়িয়ে, "দুশ্চরিত্র, লম্পট, জানোয়ার! ইচ্ছে করছে তোকে কুকুরের মত shoot করি এখন। তুই এমন চালটাই চালবি আগে বুঝেছিলাম। তাই তুই যখন সিগারেট দিয়েছিলি তখন আমি ওই বিষ মাখানো সিগারেটটা পকেটে রেখে দিয়ে ভাল সিগারেট বের করে ধরিয়েছিলাম। ভুলে যাস না, আমার পকেটেও সব সময় সিগারেট থাকে। আর মাটিতে পড়ে গিয়ে মরার ভান করাটা আশা করি তোর অভিনয়ের থেকেও নিখুঁত।"

"কিন্তু কোর্ট কি বিশ্বাস করবে মিস্টার সান্যাল? Where is the proof?"

ইন্দ্রদার একটা মোক্ষম ঘুষি পড়ল ওর নাকে, "সব প্রমাণ আছে এই টেপ রেকর্ডারে। এটা আমার পকেটেই ছিল। ইন্দ্রজিৎ সান্যাল তোর মত কাঁচা কাজ করে না মিস্টার রাজ্জাক! কি, আসল নামটা ঠিক বললাম তো?"

একদল পুলিশ ধরে নিয়ে গেল ওকে। ততক্ষণ নয়ন আমার বাঁধন খুলে দিয়েছে।

"এখনও একটা কাজ বাকি স্যার," ইন্দ্রদা হেড ইন্সপেক্টরের উদ্দেশ্যে বলল।

ইন্দ্রদা মোবাইলটা বের করে চট করে সায়ন রায়ের নম্বর ডায়াল করল। ডাকবাংলোর তালা বন্ধ করা ঘরটা থেকে রিং শোনা যাচ্ছে। দরজাটা ভেঙ্গে ফেলা হল। পাওয়া গেল একটা মৃতদেহ যার একটা হাত কাটা, অর্ধেকটা পচে গেছে। মৃতের পকেট থেকে মোবাইলের শব্দটা আসছিল। আর পাওয়া গেল মাদক দ্রব্য ভর্তি বাক্স।

ইন্দ্রদা বলল, "দেখুন তো স্যার, এই ডেড-বডিটা আসল ইন্সপেক্টরের অর্থাৎ সায়ন রায়ের কিনা?"

"হ্যাঁ! এই তো আমাদের ইন্সপেক্টর সায়ন রায়!"

"পচা গন্ধের উৎসটা বুঝতে পারছেন তো? এবার আমার কাজ শেষ।"

সেই রাতেই আমি আর ইন্দ্রদা নয়নকে ওর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলাম।আসার সময় নয়নের মা কৃতজ্ঞতার দুটো হাত বাড়িয়ে ইন্দ্রদাকে বললেন, "বাবা, তোমার নামটা তো বললে না?"
সেই রাতে
"বলছি-বলছি, সব বলছি। এত তাড়াহুড়ো করিস কেন?" ইন্দ্রদা বলল।

এর চারদিন পরের ঘটনা। ইন্দ্রদা তার চির পরিচিত ইজি চেয়ারে বসে কাঁচের টেবিলে হাতদুটো রেখে গোল্ড ফ্লেকের পরপর চারটে রিং ছেড়ে বাকিটা ইন করে জানালার ধারে বসে থাকা প্রজাপতিটাকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিল। রাত ন'টা। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি।

ইন্দ্রদা শুরু করল, "সেদিন রাতটা ছিল ঠিক আজকের মত। থোকা-থোকা কালো মেঘ ভেসে বেড়াতে-বেড়াতে কখন যে মুষলধারে বৃষ্টি নামিয়েছে.."

আমি বললাম, "তার মানে তুমি আমাদের সন্ধিগড় যাবার আগের রাতটার কথা বলছ?"

"Exactly তাই। দুর্যোগই ডেকে আনে ভয়ংকর পরিণতি। সেই রাতেই সন্ধিগড় থানায় transfer হয়ে যায় আসল সায়ন রায়। পথে পেরেক ফেলে আমাদেরই মত ওনার জিপ থামানো হয়েছিল এবং নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই মৃত্যুপুরীতে। অপরাধী ছিল চার-মূর্তি; নকল সায়ন রায়, যে আমার চোখে ধুলো দিয়ে আসছিল, যার আসল নাম রাজ্জাক। আর ছিল দীপেন, ভোলাবাবা, নয়ন।"

"নয়ন?"

"এক অভাবনীয় পরিস্থিতিতে পরেই এমন দিকে পা বাড়ায় নয়ন। সেই রাতে রাজ্জাক, যে দলের মূল পাণ্ডা হিসেবে ধরা পড়েছে, সে সায়ন রায়কে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করে নিজে সেজে যায় সায়ন রায়। রাজ্জাককে সন্ধিগড় থানার সবাই নতুন ইন্সপেক্টর বলে ভেবে নেয়। আমিও প্রথমে বুঝতে পারিনি। সন্দেহ আমার সেইদিনই হয় যেদিন ভজহরিবাবুর ঘরে তুই কালো রোমশ হাত দেখেছিলি আর ইন্সপেক্টর ওরফে রাজ্জাকের সঙ্গে আমি যখন করমর্দন করি। আমার মনে হয়েছিল, ওইটুকু সময়ের মধ্যে কেউ হাতে কালো গ্লাভস পড়ে ঘরের বাইরে এসে থাকলেও সে পালাল কিভাবে? আমার আন্দাজ যদি নির্ভুল হয় তাহলে বলতে পারি ইন্সপেক্টর রায় অর্থাৎ রাজ্জাকই সেদিন হাতে গ্লাভস পড়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল আর পরে গ্লাভসটা হাত থেকে খুলে নিয়ে চটজলদি পকেটে ঢুকিয়ে পিস্তল বের করে অভিনয় করেছিল। আমি করমর্দন করার সময় ওনার হাতে আংটিগুলো লক্ষ্য করছিলাম না, দেখতে পেয়েছিলাম আংটির ফাঁকে টুকরো কালো লোম। তখনও সন্দেহটা প্রকট হয় নি।"

"আমারা যেদিন বাংলো দেখে ফিরছিলাম আমাদের গাড়ির কাঁচে দীপেনবাবু সাবধান লিখে দিয়েছিল। তখন সায়ন রায় মানে রাজ্জাক যে গুলিটা ছুঁড়েছিল সেটা আমাদের দেখানোর জন্য!"

"একদম তাই! এত কম distance থেকে একজন পুলিশের টিপ miss হবার কথা নয়।"

"আর বাংলোতে যে মালাটা পাওয়া যায় সেটা ভজহরিবাবুকে ফাঁসানোর জন্য নিশ্চয়? আর টুপিতে কাঁচা-পাকা চুল অবশ্যই রাজ্জাকের, তাই না?
"হ্যাঁ। আর একটা প্রশ্ন তোর মনে জাগা উচিত ছিল, তালা দেওয়া ঘরটাতে search করে কিছু পাওয়া গেল না কেন? আসলে তালা দেওয়া ঘরটা search করাই হয় নি। আমি রাজ্জাককে আগেই ধরতে পারতাম। কিন্তু প্রথমত ছিল প্রমাণের অভাব, দ্বিতীয়ত পুরো দলটাকে ধরা উদ্দেশ্য ছিল আমার। আরো অনেক জায়গায় ওদের ঘাঁটি আছে যেখান থেকে ওরা মাদকদ্রব্য পাচার করে বিদেশে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি নয়ন বাড়ি থেকে পালিয়ে পথে-পথে ঘুরছিল। ওই দীপেন গাঙ্গুলি ওকে ওদের দলে টাকার লোভ দেখিয়ে টেনে আনে। দিনে ভোলাবাবা আর নয়ন গ্রামে বাপ-মেয়ে হিসেবে থাকত। রাতে বাংলোটায় ওদের ডেরা ছিল। কোনো মানুষ গেলে মুখোশ পড়ে, কালো লোমশ গ্লাভস পড়ে ভয় দেখানো হত। আর নয়ন হাসতে পারতো তীক্ষ্ণ অট্টহাসি।"

"কি ভয়ংকর দুঃসাহস?"

"সাহসের একি দেখলি? সবার পেছনে ছিল
রাজ্জাকের মাথা। অসম্ভব কূট বুদ্ধি লোকটার। সিগারেটে হাইড্রোসায়ানিক বিষ মাখিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিল। রহস্যজনক প্রত্যেকটা মৃত্যু ঘটিয়েছে রাজ্জাক। ত্রিলোকবাবুকেও সেই-ই মেরেছিল।"

"তা কি করে হয়? সেই সময় তো রাজ্জাক, মানে সায়ন রায় আমাদের সঙ্গে গাড়িতে ছিল।"

"মনে করে দ্যাখ, কাশী ভুত দেখেছিল বলে ওর বক্তব্য। তার মানে, ভোলাবাবা বা দীপেন কেউ মুখোশ পড়ে ওখানে গিয়েছিল। আমরা ত্রিলোকবাবুর ঘরে সিগারেট খাচ্ছি। সিগারেট প্যাকেটটা টেবিলের ওপর। কাশীর কথা শুনে আমরা ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলাম, তখন যে ভয় দেখাতে এসেছিল সে গেল পালিয়ে। আমাদের attention ওই দিকে। মনে করে দ্যাখ, সবার প্রথমে ঘর থেকে বেরোলেন ত্রিলোকবাবু, তারপর আমি আর তুই। ঘরে ছিল নকল সায়ন রায় বা রাজ্জাক। In the mean time, পকেট থেকে হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিডের শিশি বের করে প্যাকেটে যে দুটো সিগারেট পড়েছিল তার ফিল্টারে লাগিয়ে বাইরে ছুটে চলে আসা কি এমন কঠিন কাজ?"

" কিন্তু এতসব বুঝলে কি করে?"

"শুধুমাত্র চাই দৃষ্টিশক্তি। আর একটু বড় হ, তুইও পারবি। আমি ত্রিলোকবাবুর লাশ দেখতে যখন ঘরে ঢুকি তখন দুটো জিনিস আমাকে খটকা দেয়। ডেড-বডির হাতের তালুর কাছে ছাই এর মত গুড়ো আর ত্রিলোকনাথের ছাইদানের সিগারেট। আমরা যখন সিগারেট খাচ্ছিলাম তখন ওটা খালি ছিল। আমার আর ত্রিলোকবাবুর আধ-খাওয়া দুটো সিগারেট এর ফিল্টার ওখানে পড়ে থাকার কথা। কিন্তু পরে গিয়ে দেখলাম ছাইদানে তিনটে ফিল্টার। মানেটা দাঁড়াল এই যে আমরা চলে আসার পর ত্রিলোকবাবু সিগারেট খেয়েছিলেন। আর তাই তীব্র বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। হাতের কাছেই সিগারেটটা পড়েছিল। এবার প্রশ্ন ওটা ছাইদানে গেল কখন? আমরা যখন দুর্ঘটনা শুনে ত্রিলোকবাবু ঘরে ঢুকি তখন অনেক আগে ঢুকেছিল রাজ্জাক। প্রমাণ নষ্ট করে দেবার জন্য হাতের কাছে পড়ে থাকা সিগারেটটা তুলে ছাইদানে ফেলে দেয় রাজ্জাক। কিন্তু কিছু গুঁড়ো ছাই ওখানেই পড়ে থেকে যায়।"

"এ তো খুনির অনুপস্থিতিতে খুন?"

"তা যা বলেছিস। আর একটা সন্দেহের কারণ তোকে বলি, প্রথম দিন রাজ্জাক একটা কথা বলেছিল 'অপরাধীরা তো জেনেই গেছে তাদের পেছনে পুলিশ লেগেছে’ ... something something... আচ্ছা ও জানলো কি করে বলতো রহস্যের মূলে একজন অপরাধী নয়, অপরাধীরা রয়েছে? শুনলি তো সবই। এবার বলতো রাজ্জাক আমাদের কেন জড়াল? ও কি জানতো না গোয়েন্দা লাগালে নিজের বিপদ আরও বেশি?"

"এটা তো খুব সহজ ব্যাপার। ঘরে যে গুপ্তধন আছে তা ওরা জানতো, কিন্তু কোথায় আছে জানতো না। তাই তোমাকে কৌশলে ওখানে নিয়ে গিয়ে গুপ্তধনের সঙ্কেত শুনিয়ে গুপ্তধন হাতিয়ে নেবার তালে ছিল। নইলে ওরা তোমাকে আরও আগেই খুন করার চেষ্টা করতো।"

"Right সৌম্য! আচ্ছা, আর একটা প্রশ্ন? কাটা হাতটা অদৃশ্য হবার ব্যাপারে তোর কি মনে হয়?"

"সেই রাতে যে ভালুকটা আমাদের গাড়ির সামনে এসেছিল ও নিশ্চয় ভালুকের পোশাক পরা কেউ ছদ্মবেশী। সেই কাটা হাতটা এনেছিল। তারপর বনের রাস্তায় পালিয়ে গেলে আমরা ওর পেছনে ধাওয়া করি। তার মাঝখানে কেউ এসে হয়তো হাতটা সরিয়ে দিয়েছিল। এতজন মিলে আমাদের চোখে ধুলো দেওয়া খুব সহজ কাজ।"

বাইরে চোখ ধাঁধানো একটা বিদ্যুতের ঝলক দেখলাম। জানালাটা সজোরে বন্ধ করে দিলাম, রাতও বেশ হয়েছে।

ইন্দ্রদা বলল, "মোমবাতিটা নিভিয়ে দে।" (সমাপ্ত)

বিশেষ দ্রষ্টব্য:- তামাক সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

---- সংগৃহীত ----

View attachment 347443

জানাবেন কিন্তু গল্পটি কেমন লেগেছে, উৎসাহ পেলে আগে আরো গল্প নিয়ে আসবো আবার। ধন্যবাদ

@Anshhi @Bhoot @Babai_43 @Uronchondi @misstti @Maity Adi @InkyWhispers @ANNA007 @Ladywiththelamp @Ankita
Nice
Good morning
 
পর্ব ১১

ঘরে ঢোকার সময় দেখলাম বাইরে আলতার মত লাল রঙের বারান্দায় বসে ভজহরিবাবু আনন্দবাজার পত্রিকা পড়ছেন। জানলা দিয়ে ভেসে আসছে মন্দিরের কাঁসর-ঘণ্টা ধ্বনি। হঠাৎ ভজহরিবাবু ছুটতে-ছুটতে আমাদের ঘরে ঢুকলেন, হাতে রবিবারের সংবাদপত্রটা।

"এই যে ডিটকেটিভ-বাবু, মানে ইয়ে, মানে ইন্দ্রবাবু; কাগজে দেখুন।"

সত্যিই কাগজের দু'নম্বর পাতায় অবাক করে দেবার মত একটা খবর, একটা ছোট্ট ছবি ছাপানো হয়েছে। খবর পড়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল।

"ছবিটি নয়ন সেন নামে এক একুশ বছরের কলেজ ছাত্রীর, ১৩ ই জুন থেকে নিরুদ্দেশ, হারিয়ে যাবার সময় পরনে ছিল আকাশী রঙের চুড়িদার, শাদা ওড়না। সন্ধান পেলে দয়া করে ০৩৩২২৮.... নম্বরে ফোন করবেন।"

ছবিটা যে নয়নের সেটা পরিষ্কার, কিন্তু সব ব্যাপারটা কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ইন্দ্রদা পকেট থেকে ফোন বের করে চট করে নম্বরটা ডায়াল করল, "হ্যালো!"

"হ্যাঁ বলুন।"

"আপনি নিশ্চয়ই নয়নের মা?"

"হ্যাঁ! কিন্তু আপনাকে..."

"আমি private detective from crime branch, নয়নের সন্ধান পাওয়া গেছে।"

"অ্যাঁ! আমার নয়ন কোথায় আছে? কবে? আমাকে কি করতে হবে?"

"আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন! তবে ব্যাপারটা যতটা সম্ভব গোপন রাখবেন।"

"আমার নয়ন ভাল আছে তো?"

"Don’t worry. By the by নয়ন নিরুদ্দেশ হল কিভাবে?"

"একমাস আগে একটা তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে বাবার সাথে ওর ঝগড়া হয়। আর নয়ন খুবই একরোখা। তাই সেদিন কাউকে না বলে ও কোথায় চলে যায় জানতেও পারিনি। পরে কোনও খবরও পাই নি।"

"আচ্ছা নয়নের বাবা?"

"উনি নয়ন চলে যাবার পরের দিনই হার্ট ফেল করে..."

"Sorry, I’m really very sorry. কোনো চিন্তা করবেন না। তবে আবার বলছি জানাজানি যেন না হয়।"

মোবাইলটা কেটে দিয়ে ইন্দ্রদা আর একটা নম্বরে ফোন করল।

"হ্যাঁ আমি ইন্দ্রজিৎ বলছি ... Horrible case, রাত নটা নাগাদ পুরো force নিয়ে আসতে হবে ... সেটা গোপনীয়। এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। আচ্ছা সায়ন রায়ের মোবাইল নম্বরটা কত? ... তাহলে time maintain করে আসবেন।"

ভজহরিবাবু তখনও হাঁ করে দাঁড়িয়ে, "আপনাদের কি তাহলে সব রহস্য know হয়ে গেছে? মানে ..."

"মানে আর কিছুই নয়, সবই প্রায় হাতের মুঠোয় ভজহরিবাবু।"

"আমি এখন go." উনি যেন একটু তাড়াহুড়ো করেই বেরিয়ে গেলেন। ভজহরিবাবু চলে যাবার পর ইন্দ্রদা বাইরে বেরোল। বলল একটা tape recorder কিনতে যাচ্ছে। সন্ধ্যে ছ'টায় সায়ন রায় চলে আসার আগেই ইন্দ্রদা ফিরে এল।

◕ ◕

"ইন্দ্রজিৎ-বাবু, I have come in right time."

"হ্যাঁ, আসুন-আসুন।"

"আপনি genious, তবে জানতে ইচ্ছে করছে দীপেনবাবুই যে..."

"কৌতূহল দমন করুন। অপরাধী ধরা পড়লে সবই জানতে পারবেন।"
মুখোশ-ধারী
"দীপেন জানতে যেন না পারে আমরা ওর জন্য ওঁত পেতে বসে আছি।" সায়ন রায় জিপ থেকে নামতে-নামতে বললেন।

জ্যোৎস্নার ছিটেফোঁটা নেই আজ আকাশে। তার ওপর রহস্যময় ডাকবাংলোর ভেতর থেকে অস্বাভাবিক কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। গোটা বাড়িটা আজ অন্ধকার। ইন্দ্রদার টর্চ অনুসরণ করে চলেছি আমি আর সায়ন রায়। আলোহীন বাংলোয় প্রবেশ করতেই অস্বাভাবিক শব্দগুলো মিলিয়ে গেল। ওরা কি আজ তবে ভয় পেয়েছে?

আমি, সায়ন রায় আর ইন্দ্রদা ঘড়ির নিচে এলাম। ইন্দ্রদা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ওনাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলল। তারপর ঘড়ির মিনিটের কাঁটা বারোর ঘরে আর ঘণ্টার কাঁটা সাতের ঘরে আনতেই দেওয়াল থেকে ঘড়িটা খুলে এল। তার বদলে দেওয়ালে একটা গর্ত। টর্চ মেরে দেখা গেল চকচকে কতগুলো হীরে। আবার ঘড়িটাকে দেওয়ালে আটকে দিয়ে ইন্দ্রদা বলে উঠল, "চলুন কোথাও আত্মগোপন করে থাকি।"

আমরা এককোণে ড্রেসিং টেবিলের পেছনে রইলাম। ইন্দ্রদা আর ইন্সপেক্টরের হাতে উদ্যত পিস্তল। সব নিস্তব্ধ। ন'টা বাজতে পাঁচ, কেউ আসছে না। ইন্দ্রদার চোখে মুখে উত্তেজনা আর সায়ন রায়ের ক্ষিপ্র দৃষ্টি। একটা তীব্র পচা গন্ধ নাকে আসছিল। হঠাৎ সায়ন রায় ইন্দ্রদাকে সিগারেট অফার করলেন।

"আপনি তো সিগারেট খান না?"

"মাঝে-সাঝে খাই বইকি। তবে পকেটে থাকে, এই যেমন এখন একটা ধরালে মন্দ হবে না।"

ইন্দ্রদাও নিজের brand, gold flake টা পেয়ে বেশ খুশিই হল। অন্ধকারেই বুঝতে পারলাম ও ডান পকেট থেকে লাইটারটা বের করল। গ্যাস-লাইটের আলোর ঝলকানিতে ইন্দ্রদা প্রথমবার ধোঁয়া ছাড়ল। সায়ন রায় অদ্ভুত দৃষ্টিতে ইন্দ্রদার দিকে তাকিয়ে। ইন্দ্রদা হঠাৎ যেন কেমন হয়ে গেল। এবার বুকে হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে ইন্দ্রদা হাঁফাতে শুরু করল, "আমার গলা বু... বুক... কে... কে... কেন এমন হ... হ...হয়ে... যাচ্ছে?"

ইন্দ্রদা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, হাতের সিগারেটটা তখনও ধরা। আমি ইন্দ্রদার বুকের কাছে বসে পড়েছি। পেছন দিক থেকে একটা হাত কালো ফিতে দিয়ে আমার মুখ বেঁধে আমাকে বোবা করে দিল। তারপর থামের কাছে বেঁধে দিতেই আমি পুরো অনড় হয়ে গেলাম।

না না... তা হয় না। চোখ দিয়ে তখন আমার দু'ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়েছে। এবার চোখ গেল আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রক্তচক্ষু সায়ন রায়ের দিকে; অট্টহাসি হাসছে। বিস্ময়ে আমার চোখের জল শুকিয়ে গেছে তখন।

"হ্যাঁ আমি সায়ন রায়, ইন্সপেক্টর সায়ন রায়, রহস্যের উৎস কর্তা, বুঝলি হে ছোকরা? আর তোর ইন্দ্রদা এখন তীব্র হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড সহ্য করতে না পেরে মারা গেছে।"
দুঃখে, জ্বালায়, ভয়ে আমার ঘাম আর চোখের জল এক হয়ে গেল। এই তাহলে ইন্সপেক্টরের আসল মূর্তি। এবার পাশের ঘর থেকে আবির্ভাব হল আরও দুজন। একজন দীপেন গাঙ্গুলি আর একজন বুড়ো ভোলাবাবা, তবে সে এখন বুড়ো নয় জলজ্যান্ত এক নরপিশাচ যুবক, আর সেই রাতের ছদ্মবেশী রামনাথ। সবার অট্টহাসিতে ডাকবাংলোটা গমগম করছে। এবার সব থেকে অবাক লাগল নয়নকে পাশের ঘর থেকে আসতে দেখে। ঘরের লাইট জ্বলে উঠল। আমি অস্ফুট-বদনে নিরুপায় শক্তিহীন হয়ে আবদ্ধ রয়েছি।

হঠাৎ সায়ন রায় গর্জে উঠল, "তোকেও মরতে হবে রে ছোকরা। আর তা না হলে আমাদের পুরো দলটাকে তুই -। চলো ফ্রেন্ডস, শেষ কাঁটাটাকে সরিয়ে দিয়ে আমরা আনন্দ করি।"

নয়ন বলে উঠল, "আপনি ওনাকে ওভাবে মারলেন কেন? ইন্দ্রবাবু তো কোনো দোষ করেন নি, আর মারলেনই বা কিভাবে? যাই-হোক আমি আমার প্রাপ্য টাকা নিয়ে চলে যেতে চাই, প্লিজ আমাকে যেতে দিন।"

দীপেন গাঙ্গুলি বলে উঠল, "খুব তো দরদ দেখছি ডিটেকটিভের জন্য। প্রেমে-টেমে পড়লে নাকি?"

"আমার আর এসমস্ত খুন-খারাপি ভাল লাগছে না। আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে আমাকে যেতে দিন।"

"চলে যাবে! হা…হা…হা, তা তো যাবেই। তবে আজকের রাতটা তো আমাদের সাথে আনন্দ করে যেতে হবে।"

নয়নের দু'চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। সায়ন রায়, দীপেন ও ভোলাবাবা ওরফে রামনাথকে সিগারেট আর বিয়ার দিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে ওরা দুজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আমি অনড়, বোবা হয়ে প্রতীক্ষা করছি নিজের মৃত্যুর।

নয়ন এবার কেঁদে ফেলেছে, "একি! আপনি কি করছেন? এক-এক করে সবাইকে মেরে ..."

"হ্যাঁ নয়ন, ঠিক তাই। সিগারেটের পেছনে তীব্র হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিড লাগিয়ে আমি এদের মেরেছি। লভ্যাংশের টাকা, হেরোইনের সমস্ত লাভ এখন আমার। তুমিও বাদ যাবে না নয়ন। এর জন্য আমার পিস্তলের একটা গুলিই যথেষ্ট।"

আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি বাঁধন খোলার। এবার একটা গুলির আওয়াজ; সায়ন রায়ের পিস্তল গেছে ছিটকে। বাইরে পুলিশ ভ্যানের সিগন্যাল। ইন্দ্রদার হাতের রিভলভারের একটা গুলি সায়ন রায়ের পিস্তল ছিটকে দিয়েছে। সায়ন রায় হতভম্ব। ইন্দ্রদা মাটি থেকে উঠে উদ্বত রিভলভার হাতে দাঁড়িয়ে, "দুশ্চরিত্র, লম্পট, জানোয়ার! ইচ্ছে করছে তোকে কুকুরের মত shoot করি এখন। তুই এমন চালটাই চালবি আগে বুঝেছিলাম। তাই তুই যখন সিগারেট দিয়েছিলি তখন আমি ওই বিষ মাখানো সিগারেটটা পকেটে রেখে দিয়ে ভাল সিগারেট বের করে ধরিয়েছিলাম। ভুলে যাস না, আমার পকেটেও সব সময় সিগারেট থাকে। আর মাটিতে পড়ে গিয়ে মরার ভান করাটা আশা করি তোর অভিনয়ের থেকেও নিখুঁত।"

"কিন্তু কোর্ট কি বিশ্বাস করবে মিস্টার সান্যাল? Where is the proof?"

ইন্দ্রদার একটা মোক্ষম ঘুষি পড়ল ওর নাকে, "সব প্রমাণ আছে এই টেপ রেকর্ডারে। এটা আমার পকেটেই ছিল। ইন্দ্রজিৎ সান্যাল তোর মত কাঁচা কাজ করে না মিস্টার রাজ্জাক! কি, আসল নামটা ঠিক বললাম তো?"

একদল পুলিশ ধরে নিয়ে গেল ওকে। ততক্ষণ নয়ন আমার বাঁধন খুলে দিয়েছে।

"এখনও একটা কাজ বাকি স্যার," ইন্দ্রদা হেড ইন্সপেক্টরের উদ্দেশ্যে বলল।

ইন্দ্রদা মোবাইলটা বের করে চট করে সায়ন রায়ের নম্বর ডায়াল করল। ডাকবাংলোর তালা বন্ধ করা ঘরটা থেকে রিং শোনা যাচ্ছে। দরজাটা ভেঙ্গে ফেলা হল। পাওয়া গেল একটা মৃতদেহ যার একটা হাত কাটা, অর্ধেকটা পচে গেছে। মৃতের পকেট থেকে মোবাইলের শব্দটা আসছিল। আর পাওয়া গেল মাদক দ্রব্য ভর্তি বাক্স।

ইন্দ্রদা বলল, "দেখুন তো স্যার, এই ডেড-বডিটা আসল ইন্সপেক্টরের অর্থাৎ সায়ন রায়ের কিনা?"

"হ্যাঁ! এই তো আমাদের ইন্সপেক্টর সায়ন রায়!"

"পচা গন্ধের উৎসটা বুঝতে পারছেন তো? এবার আমার কাজ শেষ।"

সেই রাতেই আমি আর ইন্দ্রদা নয়নকে ওর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিলাম।আসার সময় নয়নের মা কৃতজ্ঞতার দুটো হাত বাড়িয়ে ইন্দ্রদাকে বললেন, "বাবা, তোমার নামটা তো বললে না?"
সেই রাতে
"বলছি-বলছি, সব বলছি। এত তাড়াহুড়ো করিস কেন?" ইন্দ্রদা বলল।

এর চারদিন পরের ঘটনা। ইন্দ্রদা তার চির পরিচিত ইজি চেয়ারে বসে কাঁচের টেবিলে হাতদুটো রেখে গোল্ড ফ্লেকের পরপর চারটে রিং ছেড়ে বাকিটা ইন করে জানালার ধারে বসে থাকা প্রজাপতিটাকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিল। রাত ন'টা। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি।

ইন্দ্রদা শুরু করল, "সেদিন রাতটা ছিল ঠিক আজকের মত। থোকা-থোকা কালো মেঘ ভেসে বেড়াতে-বেড়াতে কখন যে মুষলধারে বৃষ্টি নামিয়েছে.."

আমি বললাম, "তার মানে তুমি আমাদের সন্ধিগড় যাবার আগের রাতটার কথা বলছ?"

"Exactly তাই। দুর্যোগই ডেকে আনে ভয়ংকর পরিণতি। সেই রাতেই সন্ধিগড় থানায় transfer হয়ে যায় আসল সায়ন রায়। পথে পেরেক ফেলে আমাদেরই মত ওনার জিপ থামানো হয়েছিল এবং নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই মৃত্যুপুরীতে। অপরাধী ছিল চার-মূর্তি; নকল সায়ন রায়, যে আমার চোখে ধুলো দিয়ে আসছিল, যার আসল নাম রাজ্জাক। আর ছিল দীপেন, ভোলাবাবা, নয়ন।"

"নয়ন?"

"এক অভাবনীয় পরিস্থিতিতে পরেই এমন দিকে পা বাড়ায় নয়ন। সেই রাতে রাজ্জাক, যে দলের মূল পাণ্ডা হিসেবে ধরা পড়েছে, সে সায়ন রায়কে গলায় ফাঁস লাগিয়ে খুন করে নিজে সেজে যায় সায়ন রায়। রাজ্জাককে সন্ধিগড় থানার সবাই নতুন ইন্সপেক্টর বলে ভেবে নেয়। আমিও প্রথমে বুঝতে পারিনি। সন্দেহ আমার সেইদিনই হয় যেদিন ভজহরিবাবুর ঘরে তুই কালো রোমশ হাত দেখেছিলি আর ইন্সপেক্টর ওরফে রাজ্জাকের সঙ্গে আমি যখন করমর্দন করি। আমার মনে হয়েছিল, ওইটুকু সময়ের মধ্যে কেউ হাতে কালো গ্লাভস পড়ে ঘরের বাইরে এসে থাকলেও সে পালাল কিভাবে? আমার আন্দাজ যদি নির্ভুল হয় তাহলে বলতে পারি ইন্সপেক্টর রায় অর্থাৎ রাজ্জাকই সেদিন হাতে গ্লাভস পড়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিল আর পরে গ্লাভসটা হাত থেকে খুলে নিয়ে চটজলদি পকেটে ঢুকিয়ে পিস্তল বের করে অভিনয় করেছিল। আমি করমর্দন করার সময় ওনার হাতে আংটিগুলো লক্ষ্য করছিলাম না, দেখতে পেয়েছিলাম আংটির ফাঁকে টুকরো কালো লোম। তখনও সন্দেহটা প্রকট হয় নি।"

"আমারা যেদিন বাংলো দেখে ফিরছিলাম আমাদের গাড়ির কাঁচে দীপেনবাবু সাবধান লিখে দিয়েছিল। তখন সায়ন রায় মানে রাজ্জাক যে গুলিটা ছুঁড়েছিল সেটা আমাদের দেখানোর জন্য!"

"একদম তাই! এত কম distance থেকে একজন পুলিশের টিপ miss হবার কথা নয়।"

"আর বাংলোতে যে মালাটা পাওয়া যায় সেটা ভজহরিবাবুকে ফাঁসানোর জন্য নিশ্চয়? আর টুপিতে কাঁচা-পাকা চুল অবশ্যই রাজ্জাকের, তাই না?
"হ্যাঁ। আর একটা প্রশ্ন তোর মনে জাগা উচিত ছিল, তালা দেওয়া ঘরটাতে search করে কিছু পাওয়া গেল না কেন? আসলে তালা দেওয়া ঘরটা search করাই হয় নি। আমি রাজ্জাককে আগেই ধরতে পারতাম। কিন্তু প্রথমত ছিল প্রমাণের অভাব, দ্বিতীয়ত পুরো দলটাকে ধরা উদ্দেশ্য ছিল আমার। আরো অনেক জায়গায় ওদের ঘাঁটি আছে যেখান থেকে ওরা মাদকদ্রব্য পাচার করে বিদেশে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি নয়ন বাড়ি থেকে পালিয়ে পথে-পথে ঘুরছিল। ওই দীপেন গাঙ্গুলি ওকে ওদের দলে টাকার লোভ দেখিয়ে টেনে আনে। দিনে ভোলাবাবা আর নয়ন গ্রামে বাপ-মেয়ে হিসেবে থাকত। রাতে বাংলোটায় ওদের ডেরা ছিল। কোনো মানুষ গেলে মুখোশ পড়ে, কালো লোমশ গ্লাভস পড়ে ভয় দেখানো হত। আর নয়ন হাসতে পারতো তীক্ষ্ণ অট্টহাসি।"

"কি ভয়ংকর দুঃসাহস?"

"সাহসের একি দেখলি? সবার পেছনে ছিল
রাজ্জাকের মাথা। অসম্ভব কূট বুদ্ধি লোকটার। সিগারেটে হাইড্রোসায়ানিক বিষ মাখিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিল। রহস্যজনক প্রত্যেকটা মৃত্যু ঘটিয়েছে রাজ্জাক। ত্রিলোকবাবুকেও সেই-ই মেরেছিল।"

"তা কি করে হয়? সেই সময় তো রাজ্জাক, মানে সায়ন রায় আমাদের সঙ্গে গাড়িতে ছিল।"

"মনে করে দ্যাখ, কাশী ভুত দেখেছিল বলে ওর বক্তব্য। তার মানে, ভোলাবাবা বা দীপেন কেউ মুখোশ পড়ে ওখানে গিয়েছিল। আমরা ত্রিলোকবাবুর ঘরে সিগারেট খাচ্ছি। সিগারেট প্যাকেটটা টেবিলের ওপর। কাশীর কথা শুনে আমরা ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলাম, তখন যে ভয় দেখাতে এসেছিল সে গেল পালিয়ে। আমাদের attention ওই দিকে। মনে করে দ্যাখ, সবার প্রথমে ঘর থেকে বেরোলেন ত্রিলোকবাবু, তারপর আমি আর তুই। ঘরে ছিল নকল সায়ন রায় বা রাজ্জাক। In the mean time, পকেট থেকে হাইড্রোসায়ানিক অ্যাসিডের শিশি বের করে প্যাকেটে যে দুটো সিগারেট পড়েছিল তার ফিল্টারে লাগিয়ে বাইরে ছুটে চলে আসা কি এমন কঠিন কাজ?"

" কিন্তু এতসব বুঝলে কি করে?"

"শুধুমাত্র চাই দৃষ্টিশক্তি। আর একটু বড় হ, তুইও পারবি। আমি ত্রিলোকবাবুর লাশ দেখতে যখন ঘরে ঢুকি তখন দুটো জিনিস আমাকে খটকা দেয়। ডেড-বডির হাতের তালুর কাছে ছাই এর মত গুড়ো আর ত্রিলোকনাথের ছাইদানের সিগারেট। আমরা যখন সিগারেট খাচ্ছিলাম তখন ওটা খালি ছিল। আমার আর ত্রিলোকবাবুর আধ-খাওয়া দুটো সিগারেট এর ফিল্টার ওখানে পড়ে থাকার কথা। কিন্তু পরে গিয়ে দেখলাম ছাইদানে তিনটে ফিল্টার। মানেটা দাঁড়াল এই যে আমরা চলে আসার পর ত্রিলোকবাবু সিগারেট খেয়েছিলেন। আর তাই তীব্র বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। হাতের কাছেই সিগারেটটা পড়েছিল। এবার প্রশ্ন ওটা ছাইদানে গেল কখন? আমরা যখন দুর্ঘটনা শুনে ত্রিলোকবাবু ঘরে ঢুকি তখন অনেক আগে ঢুকেছিল রাজ্জাক। প্রমাণ নষ্ট করে দেবার জন্য হাতের কাছে পড়ে থাকা সিগারেটটা তুলে ছাইদানে ফেলে দেয় রাজ্জাক। কিন্তু কিছু গুঁড়ো ছাই ওখানেই পড়ে থেকে যায়।"

"এ তো খুনির অনুপস্থিতিতে খুন?"

"তা যা বলেছিস। আর একটা সন্দেহের কারণ তোকে বলি, প্রথম দিন রাজ্জাক একটা কথা বলেছিল 'অপরাধীরা তো জেনেই গেছে তাদের পেছনে পুলিশ লেগেছে’ ... something something... আচ্ছা ও জানলো কি করে বলতো রহস্যের মূলে একজন অপরাধী নয়, অপরাধীরা রয়েছে? শুনলি তো সবই। এবার বলতো রাজ্জাক আমাদের কেন জড়াল? ও কি জানতো না গোয়েন্দা লাগালে নিজের বিপদ আরও বেশি?"

"এটা তো খুব সহজ ব্যাপার। ঘরে যে গুপ্তধন আছে তা ওরা জানতো, কিন্তু কোথায় আছে জানতো না। তাই তোমাকে কৌশলে ওখানে নিয়ে গিয়ে গুপ্তধনের সঙ্কেত শুনিয়ে গুপ্তধন হাতিয়ে নেবার তালে ছিল। নইলে ওরা তোমাকে আরও আগেই খুন করার চেষ্টা করতো।"

"Right সৌম্য! আচ্ছা, আর একটা প্রশ্ন? কাটা হাতটা অদৃশ্য হবার ব্যাপারে তোর কি মনে হয়?"

"সেই রাতে যে ভালুকটা আমাদের গাড়ির সামনে এসেছিল ও নিশ্চয় ভালুকের পোশাক পরা কেউ ছদ্মবেশী। সেই কাটা হাতটা এনেছিল। তারপর বনের রাস্তায় পালিয়ে গেলে আমরা ওর পেছনে ধাওয়া করি। তার মাঝখানে কেউ এসে হয়তো হাতটা সরিয়ে দিয়েছিল। এতজন মিলে আমাদের চোখে ধুলো দেওয়া খুব সহজ কাজ।"

বাইরে চোখ ধাঁধানো একটা বিদ্যুতের ঝলক দেখলাম। জানালাটা সজোরে বন্ধ করে দিলাম, রাতও বেশ হয়েছে।

ইন্দ্রদা বলল, "মোমবাতিটা নিভিয়ে দে।" (সমাপ্ত)

বিশেষ দ্রষ্টব্য:- তামাক সেবন স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

---- সংগৃহীত ----

View attachment 347443

জানাবেন কিন্তু গল্পটি কেমন লেগেছে, উৎসাহ পেলে আগে আরো গল্প নিয়ে আসবো আবার। ধন্যবাদ

@Anshhi @Bhoot @Babai_43 @Uronchondi @misstti @Maity Adi @InkyWhispers @ANNA007 @Ladywiththelamp @Ankita
from what I understand, this is copyrighted material from an APP. either give credit to the original author, or it gets deleted in its entirety and you'll possibly be banned.
 
Top